দুদকের গণশুনানিতে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ৫২ অভিযোগ

চট্টগ্রাম বন্দর। প্রথম আলো ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম বন্দর। প্রথম আলো ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে ৫২টি অভিযোগ করেছেন ব্যবহারকারীরা। এসব অভিযোগের মধ্যে পণ্য খালাসের সময় বন্দরের মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের বকশিশ ও সময়ক্ষেপণের অভিযোগ ছিল বেশি।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী মিলনায়তনে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিযোগের শুনানি করেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম।

বন্দর ব্যবহারকারীদের ৫২টি লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী। যাঁরা অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৩৭ জনই উপস্থিত ছিলেন না। এরপরও অভিযোগের বিষয়ে বন্দর কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়। কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

অভিযোগ ও শুনানি
১. অনুষ্ঠানে মাহমুদুল হক নামের এক ব্যবহারকারী বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস নেওয়ার সময় বিভিন্ন যন্ত্রের চালকদের বকশিশ না দিলে তাঁরা সময়ক্ষেপণ করেন। তখন দুদক কমিশনার বলেন, এ ধরনের কেউ টাকা চাইলে চেয়ারম্যানকে জানাবেন। দুদকের হটলাইন (১০৬) অভিযোগ জানাতে পারেন। তখন বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আধা ঘণ্টার মধ্যেই ব্যবস্থা নেব। যাঁরা টাকা দেন, তাঁরাও অনিয়মে যুক্ত হন।’

২. শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী অভিযোগ করেন, জাহাজ ভিড়ানোর ক্ষেত্রে পাইলটদের সুবিধা দেয় শিপিং এজেন্টরা। তাতে দুই পক্ষই সুবিধা নিচ্ছে। আবার শেষ মুহূর্তে রপ্তানি কনটেইনার জাহাজে তোলার জন্য বিশেষ অনুমতির জন্য মাঠপর্যায়ে টাকা–পয়সা দিতে হয়। তখন বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বার্থিং মডিউল’ নামে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে। তখন আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে না। আর বিশেষ অনুমতির প্রদানের জন্য কমিটি করে দেওয়া হবে।

৩. শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সাহেদ সরওয়ার বলেন, আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কনটেইনার পণ্যের নিলাম হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। নিলাম না করায় কাস্টমসের দায় আছে। অথচ উল্টো শিপিং এজেন্টদের নানা ফিস দিতে হচ্ছে, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বন্দর চেয়ারম্যানও বলেন, আমদানিকারক কনটেইনার পণ্য নিচ্ছে না। তাহলে কেন আমদানি করল। এতে বন্দরেরও অসুবিধা হচ্ছে।

৪. আগ্রাবাদ থেকে ফারুক এবং হালিশহর থেকে সুমন নামের দুজন অভিযোগ করেন, পরিবহন বিভাগের কর্মচারী জসীম টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। তবে অভিযোগকারী দুজন উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগকারীদের বড় অংশ উপস্থিত না থাকায় দুদক কমিশনার বলেন, সৎ সাহস নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন না করলে সমস্যার সমাধান হবে না।

গণশুনানিতে বন্দরে কেনাকাটা নিয়ে কোনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। আবার বন্দর ব্যবহারকারী বড় সংগঠন বিজিএমইএ বা অন্য আমদানিকারকেরাও কোনো অভিযোগ দেননি।

শুনানি শেষে এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ৫২টি অভিযোগের বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেবেন। প্রতিবেদন দেবেন। অনিয়ম দূর করার জন্য তদারকি করা দরকার। এর আগে তিনি বলেন, ‘দুদকে আমরা যে মামলা করি, তার ৭৩ শতাংশ শাস্তি নিশ্চিত করতে পারছি। এ হার শতভাগে নিতে চাই। সে জন্য কর্মকর্তাদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে দুদকের চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম।