প্রধান শিক্ষকের যত 'দুর্নীতি-অনিয়ম'

জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া এলাকার বাংলাদেশ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, অকারণে চাকরিচ্যুত করার হুমকি, শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র ও সনদ বিতরণে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ অতিরিক্ত ফি আদায় এবং এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা। এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে বিদ্যালয়ের ২২ জন শিক্ষক ও কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. খালেদুজ্জামান প্রদীপকে লিখিত দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে ও লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এত দিন ভালোই চলছিল। ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. রজব আলী যোগদানের পর থেকেই নানা সমস্যার শুরু। তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রধান শিক্ষক হয়েও প্রায়ই দেরিতে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। অনেক সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও অন্য দিন হাজিরাখাতায় স্বাক্ষর করেন। সব সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। সম্প্রতি এক কর্মচারীকে তিনি থাপ্পড়ও মেরেছেন।

আরও অভিযোগ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে প্রতি সপ্তাহে একজন প্রধান শিক্ষক ১২টি ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও রজব আলী কোনো ক্লাস নেন না। ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নেন। এই কাজটি করতে তিনি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের সই জাল করে নিজেই নম্বরপত্র প্রস্তুত করেন ও বোর্ডে পাঠান।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোশারফ হোসেন অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে রজব আলী নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষকদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। কারণে-অকারণে নোটিশ ও চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন।

আরেক সহকারী শিক্ষক মো. সাইফুল আলম বলেন, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা অতিষ্ঠ। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেও তাঁরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। তাই তাঁরা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রতিকার চেয়ে সভাপতি বরাবর লিখিত দিয়েছেন।

যোগাযোগ করলে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খালেদুজ্জামান বলেন, অভিযোগের বেশির ভাগই সত্য। এই বিষয়ে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক রজব আলী দাবি করেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। দুজন
শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রের সভাপতির নির্দেশে তাঁদের কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ওই দুই শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে সব শিক্ষককে তাঁর বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, প্রশাসনিক কাজের জন্যই তাঁকে বিভিন্ন সময় বাইরে থাকতে হয়। তাই অনেক সময় বিদ্যালয়ে আসতে দেরি হয়।