চরে আটকা লঞ্চ, ৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার ৮০০ যাত্রী

মেঘনা নদীর চরে আটকা পড়া লঞ্চ ‘এম ভি শাহরুখ-২’। আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো
মেঘনা নদীর চরে আটকা পড়া লঞ্চ ‘এম ভি শাহরুখ-২’। আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় তোলা ছবি। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় আট ঘণ্টা পর উদ্ধার হলেন মেঘনা নদীর চরে আটকে পড়া ‘এমভি শাহরুখ-২’ নামের একটি লঞ্চের ৮০০ যাত্রী। অপর একটি লঞ্চ এসে তাঁদের উদ্ধার করে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। লঞ্চটি বরগুনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, লঞ্চে এক হাজারের মতো যাত্রী রয়েছেন।

যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, লঞ্চটি যখন চরে আটকা পড়ে, তখন লঞ্চের চালকের আসনে ছিলেন মূল সুকানির সহকারী। তিনি লঞ্চটি কালীগঞ্জ চ্যানেল হয়ে চাঁদপুরের দিকে না গিয়ে পূর্ব দিকে ভোলার পথে নিয়ে যান। এরপর লঞ্চটি ভোলার চরে আটকা পড়ে। তবে লঞ্চের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু গভীর রাতের ঘটনা, তাই তখন চালকের আসনে কে ছিলেন, তা তিনি জানেন না।

এমভি শাহরুখ-২ নামে ওই লঞ্চটি গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বরগুনা নৌবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। দিবাগত রাত তিনটার দিকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনা নদী অতিক্রমের সময় লঞ্চটি ভুল পথে যাওয়ায় ভোলার চরে আটকে যায়। লঞ্চটির সামনের অংশ ডাঙায় উঠে যায়। রাতে লঞ্চটি নামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে চালক ও লঞ্চের কর্মচারীরা গা ঢাকা দেন। সকাল হওয়ার পরও লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততায় যাত্রীরা খেপে উঠলে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা থেকে এমভি পূবালী-১ নামের অপর একটি লঞ্চ এসে যাত্রীদের উদ্ধার করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে চরে আটকে পড়া লঞ্চটি নামানো যায়নি। বেলা একটার দিকে শ্রমিক নিয়ে মাটি কেটে লঞ্চটি নামানোর উদ্যোগ নেয় মালিকপক্ষ।

মাসউদ সিকদার নামের একজন যাত্রী অভিযোগ করেন, মেঘনার কালীগঞ্জ চ্যানেলটি এমনিতেই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপরে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা এমন একটি লঞ্চ চালকের সহকারী দিয়ে চালানোর কারণে যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএর খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরেক যাত্রী মনির চৌধুরী বলেন, প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে আটকা পড়ে থাকলেও লঞ্চের কর্মচারীদের কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। এমনকি তাঁরা কোথায় ছিলেন, সেই হদিসও পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে যাত্রীরা সবাই গভীর উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে যাত্রীদের দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে লঞ্চের ক্যানটিনে খাবারের দাম দ্বিগুণ-তিন গুণ করে নেওয়া হয়।

লঞ্চের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, মূলত চালকের ভুলের কারণে এটা হয়েছে। কালীগঞ্জ থেকে চাঁদপুরের দিকে না গিয়ে লঞ্চটি পূর্বে ভোলার দিকে যাচ্ছিল। এতেই এই বিপত্তি হয়েছে। চরে আটকে পড়া লঞ্চটি নামানোর জন্য মাটি কাটার শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল অঞ্চলের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, চালকের ভুলের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট লঞ্চের চালকের বিরুদ্ধে মেরিন আদালতে মামলা করা হবে।