দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি: সংসদে অর্থমন্ত্রী

আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি
আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি। তারপরও খেলাপি ঋণ থাকা উচিত নয়। এটিকে সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। তাই যতটুকু পারি, সে ব্যবস্থা নেব। কারণ, মানুষের কষ্টার্জিত টাকা কোনোভাবেই খেলাপি ঋণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে পারি না।’

আজ বুধবার সংসদে বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানার এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৯১ সালে আমাদের মোট ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। শতাংশ হারে এটা হয় ২৬ দশমিক ১৪। বর্তমানে ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ঋণ আছে। এর মধ্যে খেলাপি ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। শতাংশ হারে ১১ দশমিক ৯৬। এই হিসাবে বলব, আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়েনি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সিস্টেমের কারণে অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। সিম্পল সুদের হারের থেকে কম্পাউন্ড হার হওয়ার কারণে সুদের হার অনেক বেশি আসে। এসব কারণে ১০ শতাংশের সুদ কখনো কখনো ১৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য আমরা সুদের পরিমাণ, কস্ট ফান্ডসহ সবই নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। ডিসেম্বরের মধ্যেই ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে পারব।’

বিএনপির সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী এ বছরের জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৬ হাজার ৫৫ কোটি টাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা।

সরকারি দলের মুহিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে খেলাপি ঋণগ্রাহকদের চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের বোর্ড সভায় খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে তা আদায়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ১০০ কোটি বা তার বেশি শ্রেণীকৃত ঋণের হিসাবগুলো নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করার জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, বিদেশে অর্থ পাচার রোধে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়েও আনা হয়েছে। বর্তমানে অর্থপাচারবিষয়ক ৪০টি মামলা আদালতে বিচারাধীন।

বিএনপির রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন স্বাভাবিক ঘটনা। বিদ্যমান বিও অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে সব বিনিয়োগকারী একই সঙ্গে লেনদেন করেন না। কিছুসংখ্যক বিনিয়োগকারী দীর্ঘ বিরতির পর বিনিয়োগ করে থাকেন।

এ বিষয়ে রুমিন ফারহানার প্রশ্ন ছিল, পুঁজিবাজারে ৩৩ লাখ বিও অ্যাকাউন্টধারীর মধ্যে সক্রিয় মাত্র ১৩ লাখ, যার অর্থ ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৩ হাজার ৪৩৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে লিকুইড মানির কোনো সংকট নেই। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংকগুলোর আবশ্যকীয় নগদ জমা সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর জমা ছিল ৭২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।

জাতীয় পার্টির ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সেবা খাতে পরিণত করতে পারিনি। কেউ কর দেয়, কেউ দেয় না। চলতি অর্থবছরের মধ্যে কর আদায়ে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হবে। এর মাধ্যমে কর আদায়ে ত্রুটি–বিচ্যুতি কমে যাবে।’