রূপগঞ্জে বালু নদে সেতু নির্মাণকাজে নতুন জটিলতা

জেটি বেহাল। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষকে। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ গুদারাঘাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
জেটি বেহাল। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষকে। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জের হাজীগঞ্জ গুদারাঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাঝিনা এলাকায় বালু নদের ওপর সেতু নির্মাণে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মে মাসে পুনরায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) সেতুর কাজ শুরু করলেও বিআইডব্লিউটিএর আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সেতু নির্মাণে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
সেতুসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএর আপত্তিতে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন না হলে এ পর্যন্ত ব্যয় করা প্রায় ৬ কোটি টাকার পুরোটাই অপচয় হবে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের জুনে সওজ কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাঝিনা এলাকায় বালু নদের ওপর ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মূল সেতুর ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। এরপর সেতুর সংযোগ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় সেতু নির্মাণে ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এরপর ভূমি অধিগ্রহণের ওই জটিলতা দূর করতে সময় লাগে দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি। চলতি বছরের মে মাসে পুনরায় সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। ঠিকাদার সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ শুরু করে মূল সেতুর অবশিষ্ট কাজ শুরু করতে গেলে ২৫ জুন বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি জানায়।
সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সড়ক উপবিভাগ-২–এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে জানান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কয়েক বছরের চেষ্টায় পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেতুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ শুরু হলে জুন মাসে বিআইডব্লিউটিএ চিঠি দিয়ে জানায় যে বালু নদকে দ্বিতীয় শ্রেণির নদ হিসেবে উন্নীত করা হয়েছে। নদের সর্বোচ্চ পানির স্তর থেকে সেতুটি ১২ দশমিক ২০ মিটার উচ্চতায় থাকতে হবে এবং এক গার্ডার থেকে অপর গার্ডারের মধ্যে ৭৬ দশমিক ২২ মিটার দূরত্ব থাকতে হবে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বালু নদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তাই ওই নদে তৃতীয় শ্রেণি হিসেবে যেসব সেতু রয়েছে, প্রয়োজনে নৌপথের স্বার্থে সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে।
বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদ অভিযানকালে দেখতে পাই, বালু নদের চ্যানেল মাটি ভরাট করে সেখানে সেতুর নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে। বিদ্যমান উচ্চতায় এবং পিলার টু পিলার গ্যাপে সেতু নির্মাণ করা হলে নদকে বাঁচানো যাবে না। তাই নদ রক্ষার স্বার্থে নদের প্রবাহ ও নৌযান চলাচল ঠিক রাখতে আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। উচ্চতা ও পিলারের দূরত্ব বাড়িয়ে সেতু নির্মাণ করা হলে আমাদের আপত্তি থাকবে না।’
সওজের প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে দেখেছি, বালু নদ একটি শাখা নদ। সেখানে বড় কোনো নৌযান চলাচল করে না। শুষ্ক মৌসুমে নদে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ মিটার পানি থাকে এবং এর প্রশস্ততা ২৫ থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে কমে আসে। এ ছাড়া আমাদের সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৭৫ দশমিক ৩০ মিটার। বিআইডব্লিউটিএ বলেছে, গার্ডারের মধ্যে গ্যাপ রাখতে হবে ৭৬ দশমিক ২২ মিটার। অথচ নদের বর্তমান অবস্থায় এ ধরনের প্রশস্ততা নেই।’
তবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রূপগঞ্জ থেকে রাজধানীতে যাতায়াত করতে স্থানীয় লোকজনকে নৌপথে পারাপার হয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে যাতায়াত করতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কিন্তু সেতু নির্মাণ হলে রাজধানীর সঙ্গে যাতায়াত করতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট। তাঁরা দ্রুত সেতু নির্মাণ করার দাবি জানান।
চলতি বছরের ২০ মার্চ প্রথম আলোয় ‘সেতুর কাজ শেষ হয়নি ১৬ বছরেও’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।