পেঁয়াজের দাম নিয়ে সংসদে ক্ষোভ, কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

পেঁয়াজের ঝাঁজ লেগেছে জাতীয় সংসদেও। পেঁয়াজের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে আজ বৃহস্পতিবার সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সাংসদ। তাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

আজ সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারদলীয় জ্যেষ্ঠ সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম। সরকার ও বিরোধী দলের পাঁচ সদস্য এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।

প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে, সে প্রশ্ন রেখে নাসিম বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটা খারাপ হবে। পেঁয়াজের দাম প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে।

নাসিম বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে দাম নামবে না, তাহলে ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যায়। বলা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন দাম বাড়ছে—এটা বোধগম্য নয়। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়ে গেছে। তিনি ভারতকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছিলেন। সংসদে অর্থমন্ত্রী আছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে বলব, পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আরও তৎপর হওয়া উচিত। অর্থমন্ত্রী যদি জবাব দেন, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হব।’

অবশ্য অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে সংসদে কোনো বক্তব্য দেননি।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর অনেক কর্তব্য রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পেঁয়াজের দাম একটু হয়তো বেড়েছে। দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আজকে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা। আমরা কোনো দিনই এটা ভাবিনি।’

তোফায়েল বলেন, দেশে পেঁয়াজের কী চাহিদা, তা আগেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। দরকার কত, আছে কত, যেটা ঘাটতি, তা তুরস্ক, মিসরসহ অন্য দেশ থেকে আগেই সংগ্রহ করা হয়।

পেঁয়াজ আমদানিতে সাময়িকভাবে শুল্ক তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তোফায়েল বলেন, ‘যাঁরা পেঁয়াজ আমদানি করেন, তাঁদের সুবিধা দিন। অনন্ত কিছুদিনের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্য করে দিন। এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হলে দেখা যাবে, এর প্রভাব বাজারে পড়ছে।’

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, ‘গত পরশু বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ টাকা। ওই দিন এই সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী দেওয়া বক্তব্যে পেঁয়াজের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বললেন। এটা বলার পরদিন দাম হয়ে গেল ১৫০ টাকা। আর আজকে হলো ২০০ টাকা।’

মুজিবুল হক বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম না পেয়ে কৃষক কাঁদছেন। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে এত ভালো সম্পর্কের পর প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পদক্ষেপ নিলে এই সংকট থাকত না।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান মুজিবুল হক। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নেই, এমন নয়। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। কিন্তু দাম বাড়ছে। তিনি মনে করেন, এটা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বিরোধী দলের এই সাংসদ আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলব, আপনারা বের করেন, এটা ষড়যন্ত্র কি না? মানুষ পেঁয়াজ কিনতে পারে না, কেবল এটা নয়, সরকারের বিরাট একটা বদনাম হচ্ছে। কিছু খারাপ কাজের জন্য অনেক ভালো কাজ ম্লান হয়ে যায়। অনেক ফেনসিডিল ব্যবসায়ী রাস্তাঘাটে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মরে যায়। পেঁয়াজের মূল্য যারা বাড়াচ্ছে, তাদের একটা বন্দুকযুদ্ধে মরে যাক। তাহলে এটা একটা উদাহরণ হবে। পেঁয়াজের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে অভিযান হওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগের সাংসদ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাজারে পেঁয়াজ আছে। এর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু গতকাল দাম ছিল ১৫০ টাকা আর আজ ২০০ টাকা।

ফিরোজও মনে করেন, পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেছে। এই সময় দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এই কাজ করছে। তিনি এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ফিরোজ বলেন, ‘নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন, যাতে পেঁয়াজের দাম অচিরেই কমে আসে। মানুষ যেন সুবিধা ভোগ করেন।’

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন পেঁয়াজ নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া উচিত।