বগুড়ায় হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ৩৫ ঘণ্টা পর উদ্ধার, নারী গ্রেপ্তার

হাসপাতালের বিছানায় ছেলেকে জড়িয়ে মা নাহিদা। ছবি: প্রথম আলো
হাসপাতালের বিছানায় ছেলেকে জড়িয়ে মা নাহিদা। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে ৩৫ ঘণ্টার মাথায় উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বগুড়া শহরের লতিফপুর কলোনি এলাকার একটি বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে সদর থানা-পুলিশ।

এ সময় শিশুটিকে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রেশমা খাতুন নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রসবের পর মুখ দেখার আগেই চুরি যায় নবজাতকটি। এতে পাগলপ্রায় অবস্থা হয়েছিল মা নাহিদা আকতারের। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার খুশিতে কাঁদতে থাকেন তিনি। রাত একটার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা নাহিদার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে।

গতকাল রাত ১২টার দিকে বগুড়া সদর থানায় বাবা সৌরভ হোসেনের কোলে সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেগঘন মুহূর্তে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এসএমএম সালেহ ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পুলিশ সুপার তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তাও দেন।

পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন বগুড়ার কাহালু উপজেলার নলঘড়িয়া গ্রামের সৌরভ হোসেনের স্ত্রী নাহিদা আকতার। কর্তব্যরত সেবিকারা ওই নবজাতককে অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষমাণ স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় নবজাতকটি চুরি করে চম্পট দেন এক নারী।

এ ঘটনায় হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে গতকাল চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। প্রসূতি নাহিদার দেবর আবদুস সামাদ বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলাও করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে শিশুটি উদ্ধারে পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামে। এর মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতাল সংলগ্ন ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই আবদুল আজিজ মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি দল রাত থেকেই শিশুটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন।

ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই আবদুল আজিজ মন্ডল প্রথম আলোকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল শাজাহানপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের রেশমা খাতুনের কোলে পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সদ্য ভূমিষ্ঠ এক নবজাতক দেখেছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রামচন্দ্রপুর গ্রামে রেশমার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু পুলিশ আসার খবর পেয়ে রেশমা নবজাতকটিকে নিয়ে বাড়ি থেকে সটকে পড়ে। এ নিয়ে বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে রেশমার এক ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে রাত ১১টার দিকে লতিফপুর কলোনি এলাকায় রেশমার ভাতিজি জামাই ফারুক হোসেনের বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় চুরি করে আনা নবজাতকটিকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন রেশমা। রেশমার কাছ থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে সদর থানায় নিয়ে আসা হয়।

চুরি যাওয়া নবজাতক বুকে ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মা নাহিদা আকতার। আজ শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নাহিদা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। নাহিদা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুকের নাড়ি ছেঁড়া ধনকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। দুদিন কিছুই মুখে দিইনি। নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। চুরি যাওয়া বুকের ধন ফিরে পাব এটা কল্পনাও করিনি। সন্তানের মুখ দেখার আগেই চুরি যাওয়ায় বুকে পাথরচাপা কষ্ট ছিল। আমার সন্তানকে ফিরে পেয়ে বুকটা হালকা ও শান্তি লাগছে। ’

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সনাতন চক্রবর্তী বলেন, রেশমা স্বামী তাঁকে ছেড়ে গেছে। তাঁর নিজের তিনটা সন্তানও রয়েছে। কেন তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন এবং কী উদ্দেশ্যে নবজাতকটি চুরি করেছিলেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি। শিশু চুরির সঙ্গে অন্য কারও হাত হাত রয়েছে কিনা, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে পাচার বা বিক্রি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই শিশুটিকে চুরি করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেশমাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।

২০১৭ সালের ৩০মার্চ বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগ থেকে হোসনে আরা নামে এক প্রসূতির সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতককে প্রায় একই কায়দায় চুরি করে পালিয়েছিলেন বগুড়া শহরতলির বারপুর এলাকার রত্না বেগম নামে এক পাচারকারী। পরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ঢেকুরিয়া গ্রামে নিয়ে গিয়ে ফুল মিয়া ও লাবনী বেগম নামে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে নবজাতকটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। চুরি যাওয়ার তিন দিনের মাথায় ২ এপ্রিল বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি ইউনিয়নের মাঝবাড়ি গ্রামের একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।