ডুয়েটে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে বছরের পর বছর

গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) রেজিস্ট্রারসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্তরা। রেজিস্ট্রার, কম্পট্রোলার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রধান প্রকৌশলী এবং গ্রন্থাগারিক—এই পাঁচ পদে বছরের পর বছর ধরে কাউকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।

বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের পছন্দের লোকদের এসব পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন যোগ্যরা বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে তাঁদের নিয়মিত পাঠদান ও গবেষণাকাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।

ডুয়েটের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদ শূন্য হলে সেই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিতে হবে; যদি কাউকে পাওয়া না যায়, তাহলে সেই পদে ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সাময়িকভাবে কাজ চালানো যাবে। সেটা স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। কিন্তু ডুয়েটে বছরের পর বছর শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় না। কোনো কোনো পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি দিলেও লোক না নেওয়ার জন্য কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, এর সব সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক রেজিস্ট্রার। তিনি সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সচিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গোপনীয় প্রতিবেদন, রেকর্ড ও দলিলপত্র এবং সাধারণ সিলমোহর তাঁর হেফাজতে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে আট বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো স্থায়ী নিয়োগ নেই। শিক্ষকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৭ মে রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলিম দাদ অবসরে যান। এরপর থেকে ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আট বছরে তিনজন শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে বর্তমান রেজিস্ট্রার যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাত বছর ধরে ওই পদে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও হিসাব–সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন করেন কম্পট্রোলার। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ডেপুটি কম্পট্রোলার আনোয়ার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলারের দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাত বছর ধরে তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ শূন্য হয়। এই পদেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে আছেন আনোয়ারুল আবেদিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে প্রকৌশল বিভাগ। এই দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদটি ২০১২ সালের আগস্টে শূন্য হয়। এরপর কাউকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মামুনুর রহমান। অন্যদিকে ১৬ বছরেও গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে এই দপ্তরের কাজ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত বা ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা প্রতি মাসে বেতনের ১২ শতাংশ অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কমিটিতে থাকার কারণে প্রতি অধিবেশন বা সভার জন্য তিন হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। এর বাইরে অন্যান্য সুবিধাও দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম অনুযায়ী। গত ২৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে অতি দ্রুত এসব পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিদের স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার দাবি ওঠে। 

যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য মোহাম্মদ আলাউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বুয়েটকে অনুসরণ করি। বুয়েটের রেজিস্ট্রার শিক্ষকদের মধ্য থেকে করা হয়। এ ছাড়া শূন্য পদগুলোর মধ্যে কম্পট্রোলার ও গ্রন্থাগারিক পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’