বান্দরবানের রুপালি ঝরনার টানে

সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে রুপালি ঝরনা। গতকাল দুপুরে বান্দরবানের রেইসার সিনিয়রপাড়ায়।  প্রথম আলো
সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে রুপালি ঝরনা। গতকাল দুপুরে বান্দরবানের রেইসার সিনিয়রপাড়ায়। প্রথম আলো

খাঁড়া পাহাড়ের পাথর বেয়ে নামছে ঝরনা। চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে সবুজ গাছগাছালি, ঝোপ-ঝাড় আর অরণ্য। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজের বুক চিরে গড়িয়ে যাচ্ছে একটি সরু রুপালি ফিতা। এ কারণেই বুঝি ঝরনাটির নামও হয়েছে রুপালি ঝরনা। বান্দরবানের রেইছার সিনিয়রপাড়ার এই ঝরনা দিন দিনই প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। রুপালি ঝরনার অপূর্ব শোভা দেখতে ছুটে আসছেন শত শত নারী-পুরুষ।

চট্টগ্রাম-কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক ধরে গেলে বান্দরবান জেলা শহরের ছয় কিলোমিটার আগে পড়বে রেইছা বাজার। বাজারের পাশে সেনাবাহিনী-পুলিশের নিরাপত্তা চেকপোস্ট–সংলগ্ন ইট বিছানো রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ হাঁটলেই চোখে পড়বে রুপালি ঝরনা। সড়ক থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত এই ঝরনার খবর দুই-তিন বছর আগেও বাইরের মানুষের কাছে অজানা ছিল। সিনিয়রপাড়ার বাসিন্দারাই পর্যটকদের এই ঝরনার খবর দেন। এরপর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকেই পর্যটকেরা এসে দেখে গেছেন রুপালি ঝরনা। এটি এখন জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে রুপালি ঝরনা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নানা বয়সের পর্যটক এসেছেন ঝরনা দেখতে। কেউ পানিতে নেমে গোসল করছেন। আর কেউবা মুঠোফোনে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

ঝরনার পাশেই ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালান স্থানীয় বাসিন্দা জাফর আলম। তিনি জানালেন, কয়েক বছর আগেও এই ঝরনার খবর বাইরের মানুষ জানত না। আর এখন প্রতিদিন শত শত পর্যটকের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে এলাকাটি। ঝরনা এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠায় তাঁর বিক্রিও বহুগুণ বেড়ে গেছে। সংসারেও এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য।

ফরিদপুর থেকে আসা মো. আলমগীর জানিয়েছেন তাঁরা ২৫ জনের একটি দল রাঙামাটি হয়ে বান্দরবানে রুপালি ঝরনা দেখতে এসেছেন। সড়কের ধারে এবং শহরের কাছাকাছি এত সুন্দর ঝরনা দেখে খুব ভালো লাগছে।

এর আগেও একবার তিনি রুপালি ঝরনা দেখতে এসেছিলেন। তখন এ জায়গায় আরও গাছগাছালি ছিল। এবার এসে দেখতে পেলেন, ঝরনার আশপাশে বনাঞ্চল কেটে উজাড় করা হয়েছে। এতে ঝরনাটি সৌন্দর্য হারিয়েছে বলে তিনি আক্ষেপ করেন।

তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সিনিয়রপাড়ার বাসিন্দারা বলেছেন, আগে রুপালি ঝরনায় সারা বছর পানির প্রবাহ থাকত। বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় বর্ষা শেষে ঝরনার প্রাণচাঞ্চল্য কমে যেতে থাকে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পানির প্রবাহ কমে গেলে ঝরনার আকর্ষণও থাকে না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছির আরাফাত বলেছেন, পর্যটন আকর্ষণের জন্য তাঁরা টাইগারপাড়া-সিনিয়রপাড়া-রুপালি ঝরনা সড়ক করে দিয়েছেন। এ সড়ক হওয়ার পর রুপালি ঝরনায় পর্যটকের ভিড় বাড়ছে।