ফুটবলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আলো

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আনোয়ারায় অনুষ্ঠিত বদলপুরা শেখ রাসেল স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বখতিয়ার সোসাইটি দল।  সংগৃহীত
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আনোয়ারায় অনুষ্ঠিত বদলপুরা শেখ রাসেল স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় বখতিয়ার সোসাইটি দল। সংগৃহীত

ছয় দশক আগের কথা। একঝাঁক তরুণ স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্রীড়া উন্নয়নের, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রসারের। গড়ে তুলেছিলেন বখতিয়ার সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। তাঁদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে আগেই। দিনে দিনে এটি হয়ে উঠেছে আনোয়ারার খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবলার তৈরির সূতিকাগার। এই সংগঠন আনোয়ারা ছাপিয়ে খেলাধুলায় আলো ছড়াচ্ছে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও।

১৯৬১ সালে শিক্ষা, ক্রীড়া, সুবিচার ও সংস্কৃতি—এই চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয় বখতিয়ার সোসাইটি নামের সংগঠনটি। আনোয়ারা উপজেলার চাঁপাতলী, ছিরাবটতলী ও পশ্চিমচাল—এই তিন গ্রামের সমমনা ৪০ জন তরুণ এ সংগঠন গড়ে তোলেন। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন ফুটবল অনুরাগী। তাই ফুটবল তাঁদের কাছে গুরুত্ব পেত বেশি।

আনোয়ারা বা আশপাশের উপজেলার বড় কোনো ফুটবল আসর বসবে—এমন খবর পেলেই একটি দল অংশ নেয় বখতিয়ার সোসাইটি থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেও মনোযোগ দিয়েছে সংগঠনটি। আর সমাজসেবামূলক কাজও করে যাচ্ছে বখতিয়ার সোসাইটি।

৭০-৮০–এর দশকে চট্টগ্রাম প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে নিয়মিত খেলতেন বখতিয়ার সোসাইটির আলী আজগর, শামসুল হক, নূর মোহাম্মদসহ অনেকে। পরে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম প্রথম বিভাগ লিগে বদরপাতি কেসির পক্ষে নাসির শেখ খেলেন।

বর্তমানে বখতিয়ার সোসাইটির মিঠু ঢাকা নবাবপুর ক্রীড়া চক্রের পক্ষে প্রথম বিভাগ লিগের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। পাশাপাশি, আরিফ, ফিরোজ, আসিফ, ছালেহ নুর, মোমিন ও গোলকিপার ইমরান চট্টগ্রামের প্রথম বিভাগ লিগসহ দেশের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যোগ্যতার সঙ্গে খেলছেন।

ফুটবলে সফলতা সম্পর্কে জানতে গিয়ে সোসাইটির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, অতীত-বর্তমান সাফল্যে উজ্জ্বল। ২০০৩ সালে বাঁশখালীর রাজাখালী গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১০ সালে আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও সোসাইটির বিকল্প দল বখতিয়ার পাইওনিয়ার ফুটবল একাদশ রানার্সআপ, ২০১১ সালে আনোয়ারার গুয়াপঞ্চক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৩ সালে গুয়াপঞ্চক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৫ সালে গুন্ধীপপাড়া টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৭-১৮ সালে গোবাদিয়া মরহুম আবদুস ছালাম স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বদলপুরা শেখ রাসেল স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে পরপর দুবার চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ১৯৯২–৯৩ সালে চট্টগ্রাম পাইওনিয়ার ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন মাদারবাড়ি মুক্তকণ্ঠের সিংহভাগ খেলোয়াড় ছিলেন বখতিয়ার সোসাইটির। পরের বছর থেকে বখতিয়ার সোসাইটির নিজস্ব দল অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া ২০০৭-০৮ মৌসুমে চট্টগ্রাম রেলওয়ের হয়ে বখতিয়ার সোসাইটি স্পোর্টস ক্লাব পুরো দল দ্বিতীয় বিভাগ লিগে অংশ নেয়। চট্টগ্রামের স্বাধীনতা কাপ ও বিজয় দিবস কাপে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছে সোসাইটি।  এখন ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটেও নজর দিয়েছে সংগঠনটি। ২০০৫-০৭ সালে আনোয়ারার মোহাম্মদপুর ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন, ২০০৭-০৮ সালে বটতলী বিজয় দিবস কাপে রানার্সআপ আর ২০০৭ সালে পাথরঘাটা ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

জানতে চাইলে বখতিয়ার সোসাইটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক নওশাদ আলী বলেন, ‘আমরা শুধু খেলাধুলাই নয়, সারা বছর বহু সামাজিক কাজ করি। এটি বছরের পর বছর ধরে করে আসছি।’

খেলাধুলার পাশাপাশি বর্তমানে বখতিয়ার সোসাইটি চালু করেছে কম্পিউটার ল্যাব ও ডিজিটাল সেন্টার। এতে হাতেকলমে শেখার সুযোগ পাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় বখতিয়ার সোসাইটি দেশ ও প্রবাসী সদস্যদের অর্থায়নে ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯১ ঘূর্ণিঝড়, রোয়ানু, রোহিঙ্গা সংকটসহ দেশের বন্যা ও অন্যান্য সংকটে বখতিয়ার সোসাইটি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

সোসাইটির চেয়ারম্যান বাবুল হক বলেন, ‘আমাদের সংগঠন শুরু হয়েছিল ৪০ জন নিয়ে। বর্তমানে দেশ–বিদেশে ৭০০ জন সদস্য আছেন। সবাই সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।’

প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৬২ সালে পাকা কার্যালয় করা হয়। আর ১৯৭২ সালে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে নিবন্ধন লাভ করে সোসাইটি। নয় শতক জায়গার অর্ধেক মাঠ আর বাকিটা পাকা কার্যালয়। কার্যালয়ের ভেতরে একপাশে আলোচনা সভার জায়গা, আরেক পাশে কম্পিউটার ল্যাব।

দেয়ালে সাঁটানো শোকেসে সাজানো আছে চ্যাম্পিয়ন রানারআপ ট্রফি আর হরেক রকম জার্সি। এসব ট্রফি সংগঠনটির ছয় দশকের পথচলার প্রমাণ বহন করে চলেছে।