স্বপ্নপূরণে অবিচল রবিউল

পরীক্ষা দিচ্ছে প্রতিবন্ধী ছাত্র মো. রবিউল। গতকাল বরকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে।  ছবি: প্রথম আলো
পরীক্ষা দিচ্ছে প্রতিবন্ধী ছাত্র মো. রবিউল। গতকাল বরকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ছবি: প্রথম আলো

সহপাঠীদের মতো তার হাত দুটি স্বাভাবিক নয়। বরং ছোট আর বাঁকা। বাঁ হাতে শক্তি নেই বললেই চলে। তবে শারীরিক এই সমস্যার কাছে হার মানতে সে রাজি নয়।

তার নাম মো. রবিউল। শারীরিক এই প্রতিবন্ধিতাকে জয় করবে বলে পণ করেছে সে। পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। ডান হাতের সাহায্যে সে খাতায় লিখতে শিখেছে।

রবিউলের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার নয়াকান্দি গ্রামে। সে কালাসাতারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিচ্ছে।

রবিউলকে গতকাল রোববার উপজেলার বরকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজি পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে। তার চুলে তেল দেওয়া। মাথা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে সে আপন মনে প্রশ্নের উত্তর লিখছে।

রবিউলের মা ভানু বেগম একজন গৃহিণী। তিনি বলেন, তাঁর দুই ছেলে। এর মধ্যে রবিউল ছোট। জন্মের পর থেকেই দুই হাতের সমস্যায় ভুগছে সে। অনেক চিকিৎসক দেখানোর পরও কোনো উন্নতি হয়নি। দুই হাতে সমস্যা থাকলেও লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক। ছেলের এই আগ্রহ দেখে তিনি অবাক হন। একটু বেশি খেয়াল রাখেন, যাতে রবিউল পড়াশোনা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, রবিউল উচ্চশিক্ষিত হতে চায়। পড়াশোনা শেষ করে স্কুলশিক্ষক হবে বলে স্বপ্ন দেখে। 

রবিউলের বাবা আবদুল জলিল। তিনি ঢাকায় থাকেন। সেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় ছেলে হাবিব নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট ছেলে রবিউল পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছেলেটা শারীরিক সমস্যায় ভুগছে। এরপরও সে লেখাপড়া করে যাচ্ছে। 

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, ‘রবিউল প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি।’