ঢাকায় বুদ্ধিসম্পন্ন সড়কবাতি দেবে সংকেত

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) পরীক্ষামূলকভাবে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সংকেতবাতি’ বসানোর কাজ করছে। সম্প্রতি গুলশান ১ নম্বর মোড়ে।  ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) পরীক্ষামূলকভাবে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সংকেতবাতি’ বসানোর কাজ করছে। সম্প্রতি গুলশান ১ নম্বর মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে কম প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। স্বয়ংক্রিয়, আধা স্বয়ংক্রিয় বা পুশ বাটন সংকেত নিয়ে চালু করা প্রকল্পগুলোর একটিও সফল হয়নি। দেখা গেছে, চালু করার পরপরই এগুলো অকেজো হয়ে গেছে। তাই এবার বসানো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিসম্পন্ন সড়কবাতি। এই বাতি নিজ থেকেই গাড়ির পরিমাণ শনাক্ত করে সংকেতের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেবে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে চারটি স্থানে এই সংকেত চালু হবে। এগুলো হলো গুলশান ১, মহাখালী মোড়, পল্টন মোড় ও ফুলবাড়িয়া মোড়। এতে সফল হলে পরে তা অন্য স্থানগুলোতেও বসানো হবে। গুলশান ১ নম্বর ও ফুলবাড়িয়া মোড়ে সংকেতবাতি বসানোর কাজও শুরু হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, চারটি স্থানে বাতি বসাতে খরচ হবে তিন কোটি টাকা। ইন্টেগেরেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এই টাকা দেবে। ২০১৫ সালের দিকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। চলতি মাসের মধ্যে বাতির কাঠামোগুলো বসানো শেষ হবে। আগামী মাসে বাকি কাজ শেষ হবে।

এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেমের (আইটিএস) ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাগুলো সড়কে থাকা গাড়ির পরিমাণ শনাক্ত করবে। যন্ত্রটি মোড় থেকে তিন শ মিটার দূরে থাকা গাড়ির সংখ্যাও গুনতে পারবে। এরপর নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেবে কোন দিকে গাড়ি চলাচলের জন্য বা বন্ধ করার বাতি জ্বালাতে হবে।

ডিটিসিএর এ প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বলেন, আধুনিক সংকেতবাতিগুলো সাধারণ সংকেতবাতি থেকে আলাদা। সাধারণ সিগন্যাল বাতিগুলোতে কত সেকেন্ড পর সবুজ বাতি বা লাল বাতি জ্বলবে, তার সময় নির্ধারণ করা থাকে। তবে এখানে সময় নির্ধারণ করা থাকবে না। জানুয়ারি থেকে এই সংকেতবাতি চালু হওয়ার পর তা মেনে চলতে পথচারী ও চালককে সচেতন করা হবে বলে তিনি জানান।

>গুলশান ১, মহাখালী মোড়, পল্টন মোড় ও ফুলবাড়িয়া মোড়ে এই সংকেত চালু হবে

আগের ট্রাফিক সংকেত কাজে লাগেনি: দুই সিটি করপোরেশনে এখনো সংকেতবাতির লাল-সবুজ দেখে গাড়ির চালকেরা আর থামছেন না। পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, মৌচাক, মগবাজার, রামপুরা ব্রিজ, গুলশান লিংক রোড, পান্থপথ মোড়, ফার্মগেটে দেখা যায় ট্রাফিক সংকেত চালু-বন্ধ হলেও পুলিশের হাতের ইশারা ছাড়া যানবাহন থামা বা চালু হয় না।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর থেকে ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অন্তত চার দফায় স্বয়ংক্রিয় ও আধা স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেতব্যবস্থা চালু করা করে। সেগুলোর জন্য ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার না হওয়ায় সেগুলোর অধিকাংশই অল্প দিনে অকেজো হয়ে যায়। ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের পর ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সংকেতবাতি এবং ট্রাফিক সংকেত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা সিটি করপোরেশনের। সে কাজ হয়নি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি পুশ বাটন সিস্টেম চালু করেছে। আসাদ অ্যাভিনিউয়ের গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে সড়ক পারাপারের আরেকটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি চালু করা হয়। এ ছাড়া ডিএমপির পক্ষ থেকে ডিএনসিসিতে মোট ৪৮ জায়গায় এই পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যালসহ জেব্রা ক্রসিংয়ের চাহিদা দেয়। সেগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০টি সংকেত বোতাম ও জেব্রাক্রসিং স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে ডিএনসিসির।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মফিজউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় একেকটি মোড়ে গাড়ি, পথচারীর পরিমাণ ও তাদের চলাচলের অভ্যাস দেখে সংকেতব্যবস্থা চালু করতে হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, ‘আইটিএসের কথা বলা হচ্ছে, তা–ও এখানে কাজ করবে না। যেসব দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে, তারা সড়ক ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খল। যতক্ষণ আমরা যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে পারব না, ততক্ষণ এখানে প্রযুক্তি দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’