পাথরঘাটায় বিস্ফোরণ নিয়ে ২ সংস্থার দুই মত

গতকাল ব্রিক ফিল্ড রোডের একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ও দেয়ালধসের ঘটনা ঘটে। ছবি: প্রথম আলো
গতকাল ব্রিক ফিল্ড রোডের একটি ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ও দেয়ালধসের ঘটনা ঘটে। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটার ব্রিক ফিল্ড রোডে কিসের বিস্ফোরণ হয়েছিল, তা নিয়ে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠান পরস্পরবিরোধী মত দিয়েছে। গ্যাসলাইন লিকেজের কারণে হয়নি বলে দাবি করেছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। আর বিস্ফোরক অধিদপ্তর বলছে, গ্যাসলাইনেই লিকেজ (ছিদ্র) ছিল।

গতকাল ব্রিক ফিল্ড রোডের পাঁচতলা বড়ুয়া ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ও দেয়ালধসের ঘটনা ঘটে। ঘটনার ভয়াবহতা এতই গুরুতর যে বড়ুয়া ভবনের নিচতলার একটি দেয়াল মূল ফটকসহ গিয়ে পড়ে রাস্তার অপর পাশের বাদশা মিয়ার ভবনের ওপর। এই বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও অন্তত ১২ জন আহত হন।

গতকাল রোববার সকালে দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যায় একটি প্রতিবেদন জমা দেয় কেজিডিসিএল। সেখানে বলা হয়, গ্যাসলাইন লিকেজের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, সেপটিক ট্যাংকি থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘গ্যাস নিঃসরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। এই ঘটনায় যদি কারও গাফিলতি থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি আগে তদন্ত করুক।’

দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, নগর পুলিশ এবং কেজিডিসিএল পৃথকভাবে একটি করে মোট তিনটি কমিটি গঠন করে। জেলা প্রশাসনের কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। নগর পুলিশের তদন্ত কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

কেজিডিসিএলের তদন্ত কমিটি রোববার সন্ধ্যায় দুই পাতার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পেট্রোবাংলায় জমা দিয়েছে। কমিটির প্রধান প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল ও সেবা) মো. সারোয়ার হোসেন। তিনি আজ সোমবার সকালে তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা দেখেছেন গ্যাস নিঃসরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেনি। কেননা গ্যাসের রাইজার, পাইপলাইন ও রান্নাঘরের চুলা সব অক্ষত ছিল। যদি গ্যাসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটত, তাহলে এগুলোর যেকোনো একটি ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

অল্প সময়ের মধ্যে তদন্ত যথাযথ হয়েছে কি না? জানতে চাইলে মো. সারোয়ার হোসেন দাবি করেন, তাঁরা যথাযথভাবে তদন্ত করেছেন। তদন্তে কোনো ধরনের ত্রুটি রাখেননি। তবে পেট্রোবাংলা বা মন্ত্রণালয় চাইলে আরও বিস্তারিত তদন্ত করতে পারে। প্রতিবেদন তা উল্লেখ করেছেন তাঁরা।

একই কথা জানিয়েছেন কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়ের আহম্মদ মজুমদার। তিনি দাবি করেন, পাঁচতলা ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের মন্তব্যকে অনুমাননির্ভর বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ সকালে প্রশাসনের দলটি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এই পরিদর্শনের আগে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল বলেন, গ্যাস লিকেজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

তবে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার পরপর জানান, কোনো কারণে গ্যাস লিকেজ ছিল। প্রাথমিকভাবে গ্যাস নিঃসরণের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।