'চাই চাই লঅ, বাছি বাছি লঅ'

সৈকতে রাতের বেলা জমজমাট সামুদ্রিক মাছের হাট। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষী বাজারে গত শুক্রবার রাতে।  প্রথম আলো
সৈকতে রাতের বেলা জমজমাট সামুদ্রিক মাছের হাট। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপকূলের রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষী বাজারে গত শুক্রবার রাতে। প্রথম আলো

‘চাই চাই লঅ, বাছি বাছি লঅ।’ গভীর রাতে জেলে আর ক্রেতাদের এমন হাঁক-ডাকে জমজমাট হয়ে ওঠে চারপাশ। চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষীর বাজার এলাকাসংলগ্ন সৈকতে রাত ১০টার পরে বসে মাছের বাজার। লোকজনের কাছে রাতের মাছবাজার নামে পরিচিত এটি। রাতে জেলেরা মাছ ধরে তীরে পৌঁছালে শুরু হয় বেচাকেনা। পাইকারি ক্রেতাদের পাশাপাশি হাটে আসেন সাধারণ ক্রেতারাও। রাতের এই মাছবাজারগুলোতে তরতাজা সামুদ্রিক মাছ মেলে। দামেও হয় সস্তা। তাই মাছ কিনতে অনেক ক্রেতা রাতের ঘুম হারাম করে হাজির হন এই বাজারে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, আনোয়ারা উপকূলে এখন চলছে ছোট মাছ আহরণের ভরা মৌসুম। এ কাজে উপকূলের অন্তত এক হাজার নৌকা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। সমুদ্রে মাছ ধরার পরপরই উপকূলে নিয়ে আসার কারণে ক্রেতারা পান বিভিন্ন জাতের তরতাজা ছোট মাছ।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশ মাছের মৌসুম শেষ হওয়ার পর শীতকালে উপকূলে শুরু হয় ছোট মাছ আহরণের মৌসুম। এ জন্য জেলেরা অল্প পুঁজিতে মাছ ধরার জন্য জাল আর নৌকা সংগ্রহ করেন। অনেকে শ্রমিকও সঙ্গে নেন। সারা দিন মাছ ধরে রাতে তীরে ফেরা জেলেরা বেশি লাভের আশায় দোভাষীর বাজার সৈকতে চলে আসেন। ক্রেতা বেশি থাকায় মাছও বিক্রি হয় ভালো। 

জেলেরা জানান, সাগরে নৌকা নিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরেন একদল জেলে। ওই মাছ রাতে উপকূলে নিয়ে আসেন জেলেদের আরেকটি দল। এতে মধ্যস্বত্বভোগী থাকে না বলে লাভ হয় ভালো।

স্থানীয় মাছ ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানান, আনোয়ারা উপকূলে অন্তত এক হাজার নৌকা দিয়ে মাছ আহরণের কাজ করেন জেলেরা। মাছগুলো উপকূলে আনার পর টুকরিতে (বাঁশের ঝুড়ি) রাখা হয়। একেক টুকরিতে ৩০-৩৫ কেজি মাছ থাকে। এই বাজারে মাছ টুকরি হিসেবেই বেশি বিক্রি হয়। এক এক টুকরির দাম ওঠে এক থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। বাজারে মেলে লইট্যা, চিংড়ি, ছুরি আর বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ।  

রাত ১০টায় উপকূলের রায়পুর ইউনিয়নের দোভাষী বাজারসংলগ্ন সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে একের পর এক মাছবোঝাই নৌকা উপকূলে ভিড়ছে আর ক্রেতারা পানিতে নেমে দরদাম করছেন। আবার নৌকা থেকে ঠেলাগাড়ি করে মাছ বালিয়াড়িতে তুলে কেউ কেউ দাম হাঁকছেন।

স্থানীয়রা জানান, পুরো উপকূলের জেলেরা মাছ কেনাবেচার জন্য দোভাষী বাজার এলাকাই বেছে নিয়েছেন। এখানেই পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মাছ কেনেন জেলেদের কাছ থেকে।

খুচরা মাছ ব্যবসায়ী আবু নাছের বলেন, ‘আমি দুই টুকরি মাছ কিনলাম তিন হাজার টাকায়। এখানে কয়েক জাতের মাছ আছে। এগুলো বাজারে বিক্রি করলে অন্তত এক হাজার টাকা লাভ পাব।’

আনোয়ারা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ হুমায়ুন মোরশেদ বলেন, আনোয়ারা উপকূলে ছোট মাছ আহরণ শুরু হয়েছে, এটি চলবে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত।