চোরাই মুঠোফোন গেল কোথায়

দ্রুত ছুটছিল প্রাইভেট কারটি। সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় পৌঁছে কারটি ঘিরে ধরে একদল লোক। কার থেকে দুজন পালিয়ে যায়। এরপর মোটরসাইকেল দিয়ে হেলমেট পরা একজনসহ দুজন কারটি গতিরোধ করে। তখন প্রাইভেট কারটি নিয়ে একধরনের কাড়াকাড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে রফা হয়। সেখান থেকে কারটি নিয়ে যায় দুজন। এ ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর প্রাইভেট কারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের বাইপাস এলাকায়।

কী ছিল প্রাইভেট কারে, কেন কাড়াকাড়ি হয়েছিল, কারটি নিয়ে এভাবে কারা ফেলে রেখেছিল—এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানা হেফাজতে থাকা একটি প্রাইভেট কার ঘিরে।

সুবিদবাজার এলাকায় কার নিয়ে কাড়াকাড়ির চিত্র সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত রয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্রের মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, কারটি দ্রুতগতিতে সুনামগঞ্জমুখী হয়ে চলাচলের একপর্যায়ে শক্ত ব্রেক কষে সাগরদিঘিরপাড় এলাকার রাস্তার দিকে চলে। ঠিক ওই সময় কারের পেছন দিক থেকে চারজন লোককে গতিরোধ করে দাঁড়াতে দেখা গেছে। কারটি দাঁড় করিয়ে রাখা অবস্থায় দুজন লোক দৌড়ে পালায়। এ দুজনকে ধাওয়া করে দুজন। এরপর মোটরসাইকেল দিয়ে দুজন লোক এসে কারটি সেখান থেকে নিয়ে যায়।

মোটরসাইকেলে থাকা দুজনের মধ্যে একজনের হেলমেট পরা ছিল। শনিবার রাত পৌনে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তেমুখীতে ওই কার পরিত্যক্ত দেখে কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক জালালাবাদ থানায় খবর দেন।

জালালাবাদ থানা সূত্র জানায়, কারটির মালিক দাবি করে দুজন লোক থানায় ওই রাতেই যোগাযোগ করলে পুলিশ কারটির কাগজপত্র দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু কথিত কার মালিক আর থানায় যায়নি। কারটি নম্বরবিহীন অবস্থায় থাকায় মালিকও চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, প্রাইভেট কারটিতে অবৈধ কিছু ছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহকারী সূত্র এবং সুবিদবাজার এলাকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, কারে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৭০০টি মুঠোফোন ছিল। এগুলো সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে আনা হয়। কারটি যখন প্রথম দফায় আটকানো হয়, তখন মুঠোফোনের মালিকানা ও বৈধতা বিষয়ে আলাপ হচ্ছিল। এরপর মোটরসাইকেলে করে দুজন লোক যখন আসে, তখন হেলমেট পরা ব্যক্তিটি পুলিশ বলে পরিচয় দেয়।

সুবিদবাজার পরিবহনস্ট্যান্ডের একজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, কারটি হঠাৎ থেমে যাওয়ার পর দুজন লোক পালিয়ে যায়। এটা দেখে তাঁরা কয়েকজন সেখানে গিয়ে কারের মধ্যে কয়েকটি প্যাকেটে বিদেশি মুঠোফোন সেট রয়েছে বলে জানতে পারেন। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা দুজন সাদাপোশাকধারী নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিলে সুবিদবাজার স্ট্যান্ডে কর্মরত পরিবহননেতারা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার দাবি জানান। তখন ওই দুজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে কারটি নিয়ে যায়। এর প্রায় এক ঘণ্টা পর কারের মালিক পরিচয় দিয়ে আরেকদল লোক ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা প্রাইভেট কারটির সন্ধান করে। এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পরিবহনশ্রমিকদের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, কারটি জালালাবাদ থানায় রয়েছে। 

পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার রাতেই দুজন লোক জালালাবাদ থানায় যায়। কারে ‘কিছু মালামাল’ ছিল জানিয়ে কারটি নিয়ে যেতে চায়। কর্তব্যরত পুলিশ কারটির কোনো কাগজপত্র না থাকায় ওই দুজনকে কাগজ নিয়ে আসার কথা বললে তারা আর থানায় যায়নি। সিলেটের শামীমাবাদ আবাসিক এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যবসায়ী পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। ঘটনার রাতে কারে ৭০০টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪০ লাখ টাকা দামের মুঠোফোন রয়েছে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে আনা হয়েছে বলেও জানায়। তবে কারটি নিয়ে কারা কাড়াকাড়ি করেছিল, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। 

সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে কথোপকথনের ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এতে অবশ্য ওই ব্যবসায়ীর দাবি, কারে ৪০০টি মুঠোফোন সেট ছিল। এর দাম ছিল ২৫ লাখ টাকা। রোববার ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তখন কার ও মুঠোফোন—কোনোটিই তার ছিল না বলে দাবি করে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে যোগাযোগ করলে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অকিল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি কার থানা হেফাজতে গ্যারেজে আছে। এটি সেই কার কি না, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারছেন না। কারটিতে কী মালামাল ছিল কিংবা কারটি নেওয়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করেছিল কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ‘না’ বলে এড়িয়ে যান।

৪০ লাখ টাকার চোরাই মুঠোফোন কারে ছিল এবং সেটি নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়েছিল—এমন তথ্য সম্পর্কে পুলিশ অবহিত নয় বলে দাবি করেন ওসি। কারটি নিয়ে কোনো তদন্ত হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং মালিক না পেলে জব্দ করা হবে—এটুকুই শুধু পুলিশের করণীয়।