প্রকাশক দীপন হত্যা: নতুন করে সমন দেওয়া হলো সাক্ষীকে

ফয়সল আরেফীন দীপন
ফয়সল আরেফীন দীপন

‘আদালতের সমন পেলে কেন যাব না? আমি কোনো সমন পাইনি। সমন না পেলে কিসের ভিত্তিতে আমি সাক্ষ্য দিতে যাব। সমন পেলে অবশ্যই সাক্ষ্য দিতে যাব’—আজ মঙ্গলবার জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান এ কথা বলেন। তিনি এ মামলার সাক্ষী।

গতকাল সোমবার প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। পরে আদালত মামলার ১ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।

সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে ফয়সল আরেফীন হত্যা মামলায় সাক্ষী রাজিয়া রহমানের নামে আজ নতুন করে সমন জারি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রফুল্ল ভবনের ঠিকানায় ও পল্লবী থানার সমন পাঠানো হয়েছে।

রাজিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের সমন না পাওয়ার কারণে তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রফুল্ল ভবনের ঠিকানা পরিবর্তন করে বর্তমানে ফুলার রোডে থাকেন। ঠিকানা পরিবর্তন করার পরও তিনি আগের ঠিকানায় সমন বিষয়ে খোঁজ নিতেন। পল্লবীর ঠিকানায় কোনো সমন যায়নি। সমন পেলে অবশ্যই আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাব।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান প্রথম আলোকে জানান, ১৩ অক্টোবর এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই দিন সাক্ষীর প্রতি সমন জারির আদেশ দেওয়া হয়। ১১ নভেম্বর প্রফুল্ল ভবন, কবি সুফিয়া কামাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ এবং পল্লবীর বাড়ি নং-১০, রোড নং -২ বি-ব্লক এর ঠিকানায় সমন পাঠানো হয়।

সাক্ষী হাজির করা সংক্রান্ত সেলের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক মো. মুস্তাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে সমন পাওয়ার পর শাহবাগ থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় ছয়জন আদালতে হাজির ছিলেন। তখন নিজেরা আদালতের কাছে নির্দোষ দাবি করেন। মামলার পলাতক দুই আসামি জঙ্গিনেতা চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিবের বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

এর আগে গত ১৯ মার্চ প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় আটজনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। মেজর জিয়া ও আকরাম ছাড়া অভিযোগপত্রভুক্ত বাকি ছয় আসামি হলেন খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল, মো. শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত, মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মো. মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও মো. আবদুস সবুর ওরফে সামাদ।

আসামিরা সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নেতা বা সদস্য। এর মধ্যে মেজর জিয়া এই গোপন সংগঠনের কথিত সামরিক শাখার প্রধান। তাঁকে ধরিয়ে দিতে এর আগে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। অভিযোগপত্রে বলা হয়, দীপনকে হত্যার নির্দেশদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ জিয়াউল হক।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর দুপুরের পর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতী প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই দিন প্রায় একই সময়ে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ, লেখক সুদীপ কুমার ওরফে রণদীপম বসু ও প্রকৌশলী আবদুর রহমানকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। দুই ঘটনায়ই আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা জড়িত বলে জানা গেছে।