রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: নতুন আইন স্থগিত করে সংশোধনের আশ্বাস চান তাঁরা

ধর্মঘটে পরিবহন নেই। যাত্রীরা অপেক্ষায়—জোটে যদি কোনো বাহন। অলংকার মোড়, চট্রগ্রাম, ২০ নভেম্বর। ছবি: জুয়েল শীল
ধর্মঘটে পরিবহন নেই। যাত্রীরা অপেক্ষায়—জোটে যদি কোনো বাহন। অলংকার মোড়, চট্রগ্রাম, ২০ নভেম্বর। ছবি: জুয়েল শীল

নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের আকস্মিক কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রামে গাড়ি চলাচল কমে যায়। পরিবহন শ্রমিকেরা চট্টগ্রামের অলংকার মোড়ে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা দিলে চট্টগ্রাম–ঢাকা মহাসড়ক ফাঁকা হয়ে যায়। এতে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ বুধবার রাত আটটায় তাঁর রাজধানীর বাসভবনে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

আন্তজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন সড়ক আইনের অনেক ধারা সম্পর্কে আমাদের আপত্তি আছে। এই আইন প্রণয়ন করার সময় আমাদের মতামত নেওয়া হয়নি। হঠাৎ করে আইনটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।’ চৌধুরী জাফর আরও বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে সড়ক ও মহাসড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। কারণ নতুন আইন নিয়ে চালক ও সহকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকেরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় আজ রাতে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করতে আহ্বান জানিয়েছেন। নতুন আইন স্থগিত করে তা সংশোধনীর আশ্বাস দিলে কর্মবিরতি স্থগিত করা হবে।’

পরিবহন সংগঠনগুলোর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ব্যবসা–বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক সব ধরনের ট্রাক ও কনটেইনারবাহী প্রাইমমুভার চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এই আশঙ্কা তৈরি হয়। কেবল বন্দরের কনটেইনার নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং শাকসবজি পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। এতে কাঁচা বাজারেও সবজির দাম বেড়েছে।

দেশের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অলংকার মোড়ে আজ ভোর থেকে শত শত পরিবহন শ্রমিক অবস্থান নেয়। বিশেষ করে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালক ও সহকারীরা অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। কেউ গাড়ি নিয়ে এলে তাঁদের ওপর চড়াও হতে দেখা গেছে। বড় গাড়ির চালকদের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে আতঙ্কে অনেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে আমরা কর্মবিরতি ডাকিনি। তবে পণ্যবাহী গাড়ির মালিক ও চালকেরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছে। তবে নানা জায়গায় বাধার কারণে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার এবং বান্দরবান–রাঙামাটি–খাগড়াছড়ি রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, ‘আমাদের সংগঠন ২১ ও ২২ নভেম্বর সভা ডেকেছে। ওই সভা থেকে আমাদের কর্মসূচি আসতে পারে। এর আগে পরিবহন কর্মবিরতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।’