'ক্যাসিনো সাইদের' বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা

মমিনুল হক সাঈদ
মমিনুল হক সাঈদ

‘ক্যাসিনো সাঈদ’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অপসারিত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিকভাবে তাঁর প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মমিনুল হক সাঈদ ২০১৮-১৯ করবর্ষে আয়কর নথিতে নিজের নামে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার টকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। দুদকের অনুসন্ধানে এ সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দুদক দেখেছে, বিভিন্ন ব্যাংকে সাঈদের নামে ২ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা পাওয়া গেছে। এই টাকা উপার্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্যও পাওয়া যায়নি। দুদক বলছে, সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ অভিযোগেই মামলাটি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, সাঈদ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছেন। দুদক বলছে, সাঈদ ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ উৎস থেকে নামে-বেনামে দেশে–বিদেশে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য আছে। ওই সম্পদসংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ জটিল ও সময়সাপেক্ষ বিধায় তদন্তের সময় তা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ওই সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা গেলে সাঈদের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

দুদক এজাহারে আরও বলেছে, সাঈদ নিজ নামে, স্ত্রী বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে সম্পদ অর্জন করলে তাও তদন্তের সময় সেসব আইনের আওতায় আনা হবে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে মমিনুল হক সাঈদের নামে সামনে চলে আসে। র‍্যাব সূত্র জানায়, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব চালাতেন সাঈদ। মোহামেডান ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর জন্য সেটিও ভাড়া নেন তিনি। যুবলীগের নেতা ও ডিএসসিসির কাউন্সিলর হিসেব এলাকায় ছিল তাঁর একক আধিপত্য। জড়িয়ে পড়েন ক্যাসিনো-বাণিজ্যে। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

শুদ্ধি অভিযান শুরুর পরপরই সাঈদ দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডে মমিনুল হক সাঈদের ক্যাসিনোর ব্যবসা আছে। মাসে দু-তিনবার তিনি বিদেশে যাওয়া-আসা করেন। ফকিরাপুল ও আরামবাগের অনেকেই তাঁকে ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামে চেনেন।

সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ নিয়ে ১৫টি মামলা করল দুদক। এর আগে ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান এবং কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছে দুদক।