মনের জোরে দৃষ্টি জয়

শ্রুতলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মহির উদ্দিন (বাঁয়ে)। ঠাকুরগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।
শ্রুতলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মহির উদ্দিন (বাঁয়ে)। ঠাকুরগাঁও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।

বয়স তখন সবে তিন মাস। চোখভরে পৃথিবীর আলো-হাওয়াই ঠিকমতো দেখা হয়নি। তখনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় মহিরের। তবে এতে দমে যায়নি সে। মনের জোর আর বাবার উৎসাহে দৃষ্টিহীনতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে সে। এবার দিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা।

মো. মহির উদ্দিন (১২) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব শুখানপুকুরী গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সে। তার দৃঢ় ইচ্ছা, প্রতিকূলতার মধ্যেও শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। হাসি ফোটাতে চায় মা–বাবার মুখে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিশক্তি হারালেও ছেলে মহিরকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা ছিল কৃষক মিলনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিরকে মুখে মুখে পড়াতে লাগলেন মিলন। মহিরও দ্রুত তা রপ্ত করে ফেলত। পরে বাড়ির পাশে পূর্ব শুখানপুকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিরকে ভর্তি করে দেন মিলন। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মহির। ২০১৭ সালে তাকে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন মিলন। এখান থেকেই শ্রুতলেখকের মাধ্যমে পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। তার কেন্দ্র পড়েছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। গত রোববার এ পরীক্ষা শুরু হয়।

গত বুধবার ছিল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি বিষয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে জানতে চাই—বড় হয়ে কী করতে চাও? জবাবে মহির বলে, ‘পড়ালেখা করে চাকরি পেলে মা-বাবাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারব। তাঁদের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করব।’