সন্তানকে বিক্রি করে জুয়া খেললেন বাবা, মায়ের মামলা

ফারুক ভূইয়া। ছবি: প্রথম আলো
ফারুক ভূইয়া। ছবি: প্রথম আলো

১৪ দিন বয়সী রাধিয়ার গায়ে জ্বর। মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন বাবা ফারুক ভূইয়া। স্ত্রীকে বললেন মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ফোন দিয়ে জানান, মেয়ে হারিয়ে গেছে। এর কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিয়ে বলেন মেয়েকে ফিরে পেতে হলে ৬ লাখ টাকা লাগবে।

গত সোমবার কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের রামদি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ বুধবার রাধিয়াকে উদ্ধার করে। সঙ্গে গ্রেপ্তার করে বাবা ফারুক ও জাকিয়া নামের এক নারীকে। ফারুক জুয়ার টাকা জোগাড় করতে মেয়েকে বিক্রি করে দেন।

ফারুকের স্ত্রী রিনা খাতুনের অভিযোগ, চিকিৎসা করানোর কথা বলে কৌশলে নিয়ে যেয়ে মেয়েকে বিক্রি করে দেয় স্বামী। বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা পান। ওই টাকা আবার ওই দিন রাতেই জুয়া খেলে শেষ করেন। শুধু তাই নয়, পরে ফোন করে এও জানান সন্তান ফিরে পেতে হলে ফারুককে দিতে হবে ছয় লাখ টাকা।

এই ঘটনায় বুধবার রিনা বাদী হয়ে কটিয়াদী থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে জুয়ার টাকার জন্য সন্তান বিক্রির অভিযোগ আনেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মূলত জ্বরের চিকিৎসা করানোর কথা বলে রাধিয়াকে নিয়ে যায় ফারুক। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিনার ছোট ভাই সফিককে ফোন দেয় ফারুক। ফোনে জানায় হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি রাধিয়াকে একজন নারীর কাছে দিয়ে শৌচাগারে যান। এসে দেখেন সেই নারী রাধিয়াকে নিয়ে নিখোঁজ। পরে রিনা ও সফিক দ্রুত ফারুকের গ্রামের বাড়ি বালিরারপাড় যান। ঘটনার পর থেকে ফারুকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েক ঘণ্টা পর ফারুক নিজেই ফোন দেন এবং জানান রাধিয়াকে পেতে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন।

মামলা হওয়ার পর পুলিশ ওই দিনই বালিরারপাড় থেকে ফারুক এবং বেতাল গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে জাকিয়া আক্তার নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে। জাকিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি রাধিয়ার ক্রেতা ছিলেন। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে দুজনের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত দুজনকে কারাগারে পাঠিয়ে রাধিয়াকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন।

স্থানীয়রা জানায়, ফারুক উপজেলার বালিরারপাড় গ্রামের বাসিন্দা। রিনা একই উপজেলার রামদি গ্রামের ফরিদ ভূইয়ার মেয়ে। ফারুক-রিনার বিয়ে হয় পনেরো বছর আগে। বিয়ের কয়েক বছরের ব্যবধানে এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে হয়। ফারুক ব্যবসা করতেন। কিন্তু জুয়া খেলার কারণে কোনো ব্যবসায় সফলতা পাননি। বর্তমানে ফারুকের অভাবের সংসার। তারপরও প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে জুয়া খেলতে যেতেন। এই সব নিয়ে বিবাদ লেগেই থাকত। গত ৫ নভেম্বর তাদের ঘরে আরেকটি মেয়ে হয়। নাম রাখে রাধিয়া।

রিনা খাতুন অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী জুয়া খেলতে খেলতে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তবে জুয়ার টাকার জন্য নিজের সন্তান বিক্রি করে দেবেন—এমনটা কখনো চিন্তাও করতে পারিনি।

পুলিশ হেফাজতে ফারুক সাংবাদিকদের জানান, জুয়া না খেললে ভালো লাগে না। স্ত্রীর কাছে টাকা চেয়েছিলেন। দিতে পারেনি। পরে ক্ষোভ থেকে মেয়েকে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় ইস্যুটিকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে স্ত্রীর কোল থেকে সহজে নিয়ে যেতে পারেন। ক্রেতা আগ থেকে ঠিক করা ছিল। বিক্রির টাকা ওই রাতেই জুয়া খেলে হেরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন ফারুক।

তবে কী কারণে সত্তর হাজার টাকা দিয়ে অন্যের সন্তান কিনলেন এই ব্যাপারে জাকিয়া মুখ খোলেননি। শুধু রাধিয়াকে টাকা দিয়ে কেনার কথা স্বীকার করেন।

কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সন্তান বিক্রির পরিকল্পনার সঙ্গে জুয়ার টাকার প্রয়োজনীয়তার সম্পর্কের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। সন্তানবিক্রির সব টাকা ওই রাতেই জুয়া খেলে শেষ করে ফেলেন।