'শিশুদের বিচার করতে হবে একমাত্র শিশু আইনে'

শিশু আইন-২০১৩ বাস্তবায়নে অংশীজনদের করণীয় শীর্ষক সেমিনারে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী (মাঝে) বক্তব্য দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত
শিশু আইন-২০১৩ বাস্তবায়নে অংশীজনদের করণীয় শীর্ষক সেমিনারে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী (মাঝে) বক্তব্য দিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, ‘শিশুদের বিচার করতে হবে একমাত্র শিশু আইনে। অন্য কোনো আইন প্রয়োগ করা যাবে না।’

শিশু আইন-২০১৩ বাস্তবায়নে অংশীজনদের করণীয় শীর্ষক সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এ কথা বলেন। যশোর জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বিচারপতির কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘যশোরের কেশবপুর উপজেলায় বাল্যবিবাহ আইনে ১৮ বছরের নিচের ছেলেমেয়েদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে—এটা শিশু আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না?’ এর জবাবে বিচারপতি উপরিউক্ত কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, শিশু আইনে বলা আছে, নয় বছরের নিচে কোনো শিশু অপরাধ করতেই পারে না। তাকে আটক করা বা তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি হবে।

শিশুরা কেন অপরাধে জড়াচ্ছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে শিশুর বিচার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, পারিবারিকভাবে অসহায় শিশুরাই মাদক বহনে কাজ করে। অল্প কিছু টাকার জন্যও খুনের মতো বড় অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাই অপরাধের সঙ্গে বেশি জড়িত হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যশোর আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাহমুদা খাতুন, পুলিশ সুপার মঈনুল হক, খুলনা বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক মো. আবদুর রহমান প্রমুখ।

শিশু আইন ২০১৩ বাস্তবায়নে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অংশীজনদের করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজসেবা একাডেমির অধ্যক্ষ এম এম মাহামুদুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা।

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘ইতিমধ্যে যশোরের সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় কোনো শিশুকে আনা যাবে না। যদি বিশেষ কোনো বিষয় থাকে, তাহলে সরাসরি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।’

যশোর কোতোয়ালি থানার শিশু ডেস্কের কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত মাসে যশোর কোতোয়ালি থানায় অপরাধে জড়িত সুবিধাবঞ্চিত ৩৪ শিশু এসেছে। তাদের ডাইভারশন (বিকল্প পন্থায় পুনর্বাসন) করা হয়েছে। কিন্তু ওই শিশুরা বারবার একই অপরাধে জড়িত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত?’

প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় সমাজসেবা একাডেমির অধ্যক্ষ এম এম মাহামুদুল্লাহ বলেন, ‘ডাইভারশন সময়ে শিশুরা যদি একই অপরাধে জড়িত হয়, তাহলে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ, এই সময়ে ওই শিশুকে কাউন্সেলিং ও তদারকি করার দায়িত্বে থাকেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা। এতে বোঝা যায় যে তিনি ঠিকমতো কাজ করছেন না। তাঁকে আরও বেশি প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজের পরিধি বাড়াতে হবে।’