হবিগঞ্জে শালুকের হাট

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা সদরে শালুকের হাট।  ছবি: প্রথম আলো
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা সদরে শালুকের হাট। ছবি: প্রথম আলো

শালুকগাছের গোড়ায় কতগুলো গুটি একত্র হয়। সেটাই শালুক ফল। কালো আবরণের খোসার ভেতরে থাকে এ সুস্বাদু ফল। গ্রামাঞ্চলে শালুক বেশ জনপ্রিয়। এটি সেদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় এ শালুক।

একেকটি শালুকের ওজন ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক এ ফল কাঁচাই খাওয়া যায়। তবে আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে খেতে ভালো লাগে। শালুক খেলে পেট ভরে, শরীরে শক্তি হয়, এমনটাই বলা হয়ে থাকে। যে কারণে শালুক বেশ জনপ্রিয়। আর শালুক
নিয়ে ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’ গানটি জানে না, এমন মানুষ কি পাওয়া যাবে এই দেশে?

চিকিৎসক মজিবুর রহমানকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, শালুক হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায়। চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য খাওয়া যায়। শালুকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। পাশাপাশি ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রচুর। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যালার্জি ও প্রচুর আয়রন থাকায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

এ শালুকের অন্যতম পাইকারি হাট এখন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা সদরে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশ সুবিধাজনক হওয়ায় এ হাট কয়েক বছর ধরে বেশ জমে উঠেছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে শালুকের এ হাট। ভোর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হবিগঞ্জ ছাড়াও এর আশপাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে শালুক ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। পাইকারেরা ট্রাক বোঝাই করে শালুক নিয়ে যান দেশের নানা স্থানে।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থেকে শালুক ব্যবসায়ী শহীদ মিয়া মাধবপুর বাজারেই আসেন। কারণ, শালুকের জন্য এর চেয়ে ভালো হাট আর নেই। এখানে শালুক দামেও সস্তা।

মাধবপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. সেলিম বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে এ বাজারের পরিধি বাড়ছে। যে জায়গায় এ হাট বসে, সেখানে একসময় ধান বেচাকেনা হতো। শালুকের চাহিদা বাড়ায় এখন এ জায়গায়শালুকের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ১০ টন শালুক, অর্থাৎ ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়।