কী হবে সেই ৩২ শিক্ষার্থীর?

শারমিন আক্তার। ক্লাসে রোল নম্বর ১০। গণিতে সে ২২ নম্বর পেয়েছে। ২৩ পেলে পাস করত। ১ নম্বর কম পাওয়ায় ৫০০ টাকা জরিমানা করে বিশেষ বিবেচনায় তাকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়েছে। শারমিনের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ আড়াই হাজার টাকা আদায়ও করা হয়েছিল।

এভাবে পাস নম্বর থেকে ১ থেকে ৩ পর্যন্ত কম পাওয়া ৩২ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি বিষয়ে অকৃতকার্যের জন্য ৫০০ টাকা হারে জরিমানা আদায় করা হয়। অকৃতকার্যদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ফরম পূরণের অভিযোগে ইউএনওর নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিদ্যালয়টির নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল শিট জব্দ করেন। পরে ৩২ শিক্ষার্থীর টাকা ফেরত দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কাল ২৬ নভেম্বর এসএসসির ফরম পূরণের শেষ দিন। শিক্ষকদের টাকা আদায়ের কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ৩২ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করতে পারছে না। ফলে তাদের সোনালি ভবিষ্যৎ যাত্রায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এই ঘটনা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সেরা পাঁচ বিদ্যালয়ের একটি বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের। এসএসসির ফরম পূরণ করতে না পেরে প্রতিষ্ঠানটির অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা গত শনিবার শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে ঢাকা-সাগরদীঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের আন্দোলন থেমে যায়। 

গতকাল রোববার বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। সবার এক কথা, দোষ করলে শিক্ষকেরা করেছেন। এর দায়ভার শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপবে কেন? এর খেসারত কেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দেবে?

বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সুমি আক্তার। ক্লাসে রোল নম্বর ৯। সে নির্বাচনী পরীক্ষায় গণিতে পাস নম্বর ২৩-এর মধ্যে ২২ পেয়েছে। শিক্ষকেরা বিশেষ বিবেচনায় তাকে উত্তীর্ণ দেখিয়েছেন বলে জানায় সে। ফরম পূরণের জন্য জরিমানা নেওয়া হয়েছিল। এখন টাকা ফেরত দিতে চাইছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সুমি টাকা নেয়নি।

আরেক শিক্ষার্থী পারভেজ খান বলে, ‘আমি প্রিটেস্ট পরীক্ষায়ও এ প্লাস পেয়েছিলাম। মাত্র ১ নম্বরের জন্য আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে।’

বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক আবদুল গণি বলেন, তাঁর বিশ্বাস ৩২ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করলে সবাই পাস করবে।

রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক মোর্শেদ আলম অভিযোগ করেন, তাঁর ফলাফল শিটে বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেছে ১৭ জন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সহকারী প্রধান শিক্ষক ফলাফল শিটে মাত্র ১২ জনকে পাস দেখিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয়, অকৃতকার্যদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মাত্র ১২ জনকে পাস করিয়েছেন।

দুলাল হোসেন নামের একজন অভিভাবক বলেন, দোষ করেছেন শিক্ষকেরা আর খেসারত দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীরা। তার মেয়ে কয়েক দিন ধরে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছে না।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রথম ধাপে ১২ জন পাস করলেও পরে বিশেষ বিবেচনায় আরও ৩২ জনকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কাছে অভিযোগ যাওয়ায় এখন আইনের ফ্যাকরায় পড়েছেন। তিনি জানান, এ বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে ৮১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৯ জন জিপিএ-৫ পেয়ে ৮০ জন উত্তীর্ণ হয়। ২০১৮ সালে ৭০ জনের মধ্যে ১৭ জন জিপিএ-৫ পেয়ে ৬৪ জন উত্তীর্ণ হয়। আর ২০১৯ সালে ৮০ জনের মধ্যে ৫০ জন পাস করে। অথচ এবার শিক্ষকদের ভুলের কারণে মাত্র ১২ জন ফরম পূরণের সুযোগ পাচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এসব বিষয়ে বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লাল মিয়া দাবি করেন, উপজেলার ৪৯টি উচ্চবিদ্যালয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী ফরম পূরণের সুযোগ পেলেও তার বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ভুল থাকলে আমার বিচার হোক। প্রয়োজনে ভুলের ক্ষমা চাইব। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হোক, সেটা আমি চাই না।’ তিনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা কামনা করেন।