পাইলটের আকাশ ছোঁয়া হয়নি

সৌদি আরবে যাওয়ার আশায় পাইলট এভাবেই তৈরি হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর আর যাওয়া হলো না। ছবি: প্রথম আলো
সৌদি আরবে যাওয়ার আশায় পাইলট এভাবেই তৈরি হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর আর যাওয়া হলো না। ছবি: প্রথম আলো

জন্মের পর মা-বাবা আদরের সন্তানের নাম রেখেছিলেন পাইলট আলী (২৪)। আশা ছিল পাইলট হয়েই আকাশ ছোঁবেন তিনি। অভাবের সংসারে তা আর হয়ে ওঠেনি। পরে বিমানে চেপে সৌদি আরবে গিয়ে চাকরি করার স্বপ্ন দেখেন পাইলট। জমি ও মায়ের গয়না বিক্রি করে সাড়ে সাত লাখ টাকা তুলে দেন প্রতিবেশী বিচ্ছেদ আলীর (৫৫) হাতে। পাইলটের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বিচ্ছেদ তাঁকে বিদেশেও পাঠাননি, টাকাটাও ফেরত দেননি। এখন তাঁরা সর্বস্বান্ত।

পাইলট নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের তকিনগর গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে। এ ব্যাপারে জানতে বিচ্ছেদের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর বোন আসমা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে পাইলটের পরিবারের কোনো রকম লেনদেন হয়নি।

বাগাতিপাড়া থানা-পুলিশ ও পাইলটের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পাইলটকে প্রতিবেশী বিচ্ছেদ আলী সৌদি আরবে হোটেল বয় হিসেবে চাকরির জন্য প্রস্তাব দেন। পাইলটের বাবা তাতে রাজি হলে প্রথমে চার লাখ টাকা নেন বিচ্ছেদ আলী। মোট ছয় লাখ টাকা দেওয়ার পর পাইলট ভিসার কপি হাতে পেয়ে দেখেন সেটি জাল। ভিসার নম্বরের সঙ্গে পাইলটের নাম মেলে না। এ ব্যাপারে ভুল স্বীকার করেন বিচ্ছেদ। পরে নতুন করে ভিসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। ভিসা ও মেডিকেল পরীক্ষার জন্য চান আরও দেড় লাখ টাকা। দেড় লাখ টাকা না হলে সব প্রচেষ্টা শেষ হয়ে যাবে বলে জানানোর পর আবারও দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাইলটের জামাকাপড়, লাগেজ কেনার জন্য ব্যয় করা হয় আরও ৫০ হাজার টাকা। একপর্যায়ে ভিসা দিতে দেরি হলে বিচ্ছেদের ওপর পাইলটের পরিবারের সন্দেহ হয়। দীর্ঘদিনের বাহরাইনপ্রবাসী একই গ্রামের সাইফুল ইসলামকে পুরো ঘটনা জানালে তিনি কাগজপত্র দেখে জানান তাঁরা প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। এরপর বিচ্ছেদ আরেকটি ভিসা এনে দেন। দেখা যায় দ্বিতীয় ভিসাটিও ভুয়া। ভিসাটির প্রকৃত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আল ইউসুফ। ফলে পাইলটের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। টাকাও ফেরত পাননি।

সম্প্রতি পাইলটের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাইলটের বিদেশে যাওয়ার খরচ জোগাতে বিক্রির জন্য কেটে রাখা একটি মেহগনি গাছ তখনো উঠানে পড়ে আছে। উঠান পেরিয়ে একটি খড়ের ছোট্ট ঘরে থাকেন পাইলট, তাঁর চাচা মিজানুর রহমান ও দাদি শাহিদা বেওয়া। অন্য একটি ঘরে থাকেন তাঁর মা-বাবা। ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে মোজাহার এখন দিনমজুরি করছেন। মা বিজলি বেগম নির্বাক।
মোজাহারের ভাষ্য, সন্তানের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কথা ভেবে শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি চার লাখ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। বৃদ্ধা দাদি দিয়ে দেন দাদুর শেষ সম্বল তিন শতাংশ জমি বিক্রির এক লাখ টাকা। ছোট চাচা ময়েন উদ্দীন নিজের ভাগের জমি বিক্রি করে দেন এক লাখ টাকা। মা বিজলি বেগমও গয়না বিক্রি করে দেন আরও এক লাখ টাকা। তিনি জানান, টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় তিনি গত ৩০ অক্টোবর বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাগাতিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদুর রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে।