১২০ বছর পূর্তি উদ্যাপন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার ১২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা। গতকাল সকালে নিউমার্কেট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার ১২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা। গতকাল সকালে নিউমার্কেট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সাবেক সচিব মো. আবদুল আজিজ ১৯৭০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ১৯৬৩ সালে এই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি এই কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতাও করেন। 

শুধু তাঁরাই নন, দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আমলা, বিচারপতি, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীসহ নানা পেশার নামজাদা অনেকেই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল রোববার কলেজেটির ১২০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হয়। এ উপলক্ষে নবীন–প্রবীনের মিলনমেলা হয়। দিনভর নানা আয়োজনে মুখর ছিল কলেজ প্রাঙ্গণ। 

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এই কলেজের বহু শিক্ষার্থী অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধে এখানকার বহু শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন। 

দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ শোভাযাত্রা, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের উদ্বোধন, আলোচনা সভা, গুণীজন সম্মাননা, স্মৃতিচারণা, প্রীতিভোজ, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সকাল নয়টায় কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখা থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেটি নগরের কলেজ রোড, কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর ও টাউন হল এলাকা ঘুরে আবার কলেজে গিয়ে শেষ হয়। এরপর কলেজের জামতলায় অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লা-৬ আসনের সাংসদ ও কলেজের ১৯৭০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী, কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু জাফর খান, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ রায় ও সাবেক অধ্যক্ষ আমীর আলী চৌধুরী। 

সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও ভালো করেছেন। 

পাঁচ গুণীজনকে সম্মাননা: কলেজের পাঁচ প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন কুমিল্লা-৬ আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আবদুল আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক কলেজের সাবেক ভিপি নাজমুল হাসান। তাঁদের উত্তরীয় ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। 

কলেজের একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী ফাতেমা জাহান ও সুলতানা জামাল বলেন, ‘এত গুণীর সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে আনন্দিত।’ 

কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চান্স পাওয়া ফাহমিদা রহমান বলেন, ‘এই কলেজের কাছে আমাদের অনেক ঋণ।’ 

অধ্যক্ষ রুহুল আমিন বলেন, ১৮৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতবর্ষে শিক্ষাবিস্তারের জন্য জমিদার রায়বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস) কোর্স, ২০টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। ২৭ হাজার শিক্ষার্থী, ১৬৪ জন শিক্ষক, ১০০ জন কর্মচারী রয়েছেন। এ বছর এই কলেজ থেকে ৩৫৪ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১২৪ জন মেডিকেলে, ৩৪ জন বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। তাঁদেরও ক্রেস্ট দেওয়া হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।