রক্তাক্ত-অচেতন অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করা হয়, দুঃসহ বর্ণনা সুবর্ণচরের সেই নারীর

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

‘রুহুল আমিন মেম্বারের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় ওই রাতে মেম্বারসহ ১৬ জন আমাকে নির্যাতন করেছে। রক্তাক্ত-অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কয়েক দিন আগে বাড়ি এসে আমার মেয়েকে মারধর করেছে। আমি এই অন্যায়ের বিচার চাই। আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।’

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার নারী গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে তাঁর ওপর হওয়া নির্যাতনের বিবরণ দেন এভাবেই। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সোমবার সকালে শহীদ মিনারের পাদদেশে ‘ধর্ষণ ও সকল যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতীকী অনশন’–এর আয়োজন করে ‘আমরাই পারি’ পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। অনুষ্ঠানে এই নারী নিজের নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বলার পাশাপাশি তিনি সরকারপ্রধানের কাছে এ ঘটনার বিচার ও নিরাপত্তা চান।

সহিংসতার শিকার এক নারীর ভাই তাঁর বোনের মৃত্যুর পরে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি বোনের হত্যার বিচার চাই না। কারণ, আমি বিচার পাব না।’

চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানান এ জোটের চেয়ারপারসন ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এর বড় কারণ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বললে বিচার হবে, না বললে বিচার হবে না—এ কেমন সংস্কৃতি? তিনি আরও বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা ও বিচারহীনতায় আমরা ক্ষুব্ধ, শোকাহত ও ভারাক্রান্ত। তবু আমরা এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করব, প্রতিকার চাইব।’

অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, ধর্ষণ বা নির্যাতনের শিকার নারীরা নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন। পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। আর অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটার পরেও সরকার থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মেনে নেওয়া হবে না।

দ্রুততম সময়ে প্রতিটি ঘটনার ন্যায্য বিচারের দাবি জানান জোটের নির্বাহী সমন্বয়ক জিনাত আরা হক। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বিভিন্ন মানবাধিকার, নারী অধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

একই দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে গতকাল দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা বলেন, পারিবারিক কোন্দলের কারণে ৯০ শতাংশ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। চাচা-মামাসহ নিকটাত্মীয়রাও এতে জড়িত থাকেন। জেন্ডারভিত্তিক এ সহিংসতার বিরুদ্ধে পাড়া, মহল্লায় জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেন, সমাজ থেকে ধর্ষণ তথা যৌন নির্যাতন বন্ধে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আশা টরকেলসন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাল্টিসেক্টরাল কার্যক্রমের পরিচালক আবুল হোসেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা প্রমুখ।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি চলমান সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে পালন করা হবে।

দিবসটি পালন করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা বন্ধে সোচ্চার হোন’ স্লোগানে নারী অধিকার বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।