ভৈরবে ট্রেনে ঢিলে এক সপ্তাহে গার্ডসহ আহত ৬

ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী একটি মালবাহী ট্রেন ১৯ নভেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে ভৈরবের জগন্নাথপুর এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় কারও ছোড়া একটি পাথর এসে আঘাত করে ট্রেনটির পরিচালকের (গার্ড) চোখে। কয়েক মিনিট পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ভৈরব স্টেশনে গিয়ে ট্রেনটি যাত্রাবিরতি দেয়।

ট্রেনটির গার্ড হাফিজুর রহমান ততক্ষণে অচেতন হয়ে পড়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ক্রমেই হাফিজুরের অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে তাঁকে নেওয়া হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার জানতে চাইলে ভৈরবের স্টেশনমাস্টার মো. কামরুজ্জামান এসব তথ্য জানান। হাফিজুর রহমানের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সেদিন ট্রেনটি ধীরগতিতে চলছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাথরের আঘাতে গার্ড হাফিজুর চোখে অন্ধকার দেখেন। এরপর আর কিছুই তিনি বলতে পারেননি। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ভৈরব স্টেশনের আশপাশের এলাকা থেকে ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা বেড়ে গেছে। টানা কয়েক দিন পাথর ছোড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভৈরব স্টেশনের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পাথরের আঘাতে ট্রেনের গার্ড ছাড়াও পাঁচ যাত্রী আহত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে রেলওয়ে পুলিশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। তারা না পারছে পাথর নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত করতে, না পারছে আইন প্রয়োগ করতে, না পারছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

>

একদল শিশু-কিশোর রেললাইনের পাথর কুড়িয়ে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ছুড়ে মারছে বলে রেলওয়ে পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করাকে প্রাথমিক সমাধান হিসেবে দেখছে রেলওয়ে পুলিশ। ভৈরব রেলওয়ে পুলিশ সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ভৈরবের অদূরে দৌলতকান্দি রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া মাঠে গত শনিবার বিকেলে সভা করা হয়। ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস, স্টেশনমাস্টার মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, ট্রেন চলাচলের লাইনের শক্তি বাড়াতে দুই পাশে পাথর দেওয়া হয়। কেউ কেউ এসব পাথর কুড়িয়েই চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ছুড়ে মারছে। এতে আক্রান্ত যাত্রীর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। চলন্ত ট্রেনে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কারণে যাত্রীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হয় না। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, শিশু-কিশোরেরা মজা করে চলন্ত ট্রেনের দিকে পাথর ছুড়ে মারে। আবার অনেক সময় বড়রাও এই কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন।

সভা থেকে জানানো হয়, এ ধরনের কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ। ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধ করতে স্থানীয় সমাজসচেতন ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ খুবই জরুরি। স্থানীয় বাসিন্দারাই পারেন, তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় কারা ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে, তাদের শনাক্ত করতে। কিশোরদের বোঝাতে হবে, ট্রেনে পাথর ছোড়া মজার কোনো বিষয় হতে পারে না। এতে একজন যাত্রীর চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি পাথরের আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কোনো যাত্রীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ ধরনের সর্বনাশা খেলা করা যাবে না।

ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসে না। বিচ্ছিন্নভাবে আমরা খবর পাই। টানা কয়েক দিন ভৈরবের আশপাশ থেকে পাথর ছোড়ার খবর আসছে। সমস্যা হলো, ট্রেনটি চলন্ত থাকার কারণে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সভা করে আমরা বোঝাব স্থানীয় বাসিন্দারা যেন অপরাধীদের শনাক্ত করেন এবং পুলিশের হাতে তুলে দেন। তখন চিত্রের পরিবর্তন আসতে পারে।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সম্প্রতি ট্রেনে পাথর ছোড়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে ভৈরবের জগন্নাথপুর, লক্ষ্মীপুর এলাকা এবং নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর ও দৌলতকান্দি এলাকায়।

এ বিষয়ে ভৈরবের স্টেশনমাস্টার মো. কামরুজ্জামান বলেন, শুধু পাথর ছুড়ে মারার কারণে যাত্রীদের যাত্রা অনিরাপদ হয়ে পড়ার পাশাপাশি ট্রেনের কামরার দরজা-জানালার কাচ ভেঙে যাচ্ছে। ট্রেনের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষ করে এলাকার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা দরকার।