হাতের ইশারা থেকে সিগন্যাল বাতিতে ফিরেছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হাতের ইশারা থেকে আধুনিক সিগন্যাল বাতিতে ফিরে আসছে নগরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা। নগরের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সিগন্যাল বাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরে সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক কার্যক্রম প্রবর্তন করা হবে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা কার্যকরভাবে সিগন্যাল বাতি চালুর পরামর্শ দিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশের এ কার্যক্রমে কিছুটা শৃঙ্খলা আসতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে গোটা নগরে সিগন্যাল বাতি চালুর পরামর্শ দেন একজন প্রকৌশলী।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সিটি করপোরেশনের সহায়তায় আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে গত সপ্তাহ থেকে সিগন্যাল বাতির মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা শুরু করে। প্রথমে আগ্রাবাদ বাদামতলী এবং টাইগারপাস মোড়ের অকেজো সিগন্যাল মেরামত করা হয়। গত সপ্তাহে সিগন্যাল বাতি দিয়ে ট্রাফিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়। গতকাল সোমবার সকালে ওয়াসা মোড়ের অকেজো বাতিগুলো সচল করা হয়। আজ মঙ্গলবার সচল হতে পারে ষোলশহর মোড়ের সিগন্যাল বাতি।

হাতের ইশারা থেকে সিগন্যাল বাতি ব্যবস্থাপনায় ফিরিয়ে যাওয়া ক্ষত জায়গায় মলম লাগানোর মতো বলে মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নগরে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। একটি মোড় বা জংশনে কতটি গাড়ি প্রতি মিনিটে পারপার হয়, তার ডিজাইন তৈরি করতে হবে।

সুভাষ বড়ুয়া আর বলেন, ডিজাইন না করে সিগন্যাল বাতিতে ফিরে গেলে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হবে না। অর্থাৎ একটি জংশনে চার–পাঁচ দিক থেকে গাড়ি পারাপার হয়। উত্তর বা দক্ষিণমুখী গাড়ি পারপার করলে পূর্ব ও পশ্চিমমুখী গাড়ির জট লেগে যাচ্ছে কি না, তা ডিজাইন করে বের করতে হবে। তবে সিগন্যাল–ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ায় কিছুটা সুফল আসতে পারে।

>

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে নগরের কিছু সিগন্যাল বাতি নষ্ট হয়। তখন সব কটি মেরামত করা হয়নি।

নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আমির জাফর বলেন, ‘অচল সিগন্যাল বাতি পর্যায়ক্রমে আমরা চালু করছি। এখন কেবল সেমি–অটোমেটিক পদ্ধতিতে সিগন্যাল বাতি জ্বলছে। এর সঙ্গে ডিজাইনের বিষয়টিও জড়িত আছে। কিন্তু বড় জংশনগুলো চালু করার পর ডিজাইনের কাজ শুরু হবে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যেতে আরও সময় লাগবে।’

তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের ৩৯টি মোড়ে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে। একই সরকারের আমলে পরে আরও পাঁচটি মোড়ে নতুন করে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে কিছু সিগন্যাল বাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত একটানা কয়েক বছর চট্টগ্রাম নগর পুলিশ ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ওই সময় কোনো বাতির কারিগরি ত্রুটি দেখা দিলে পুলিশ সিটি করপোরেশনকে জানাত। সিটি করপোরেশন তা মেরামত করে দিত।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ২০১২ সালে ২১টি মোড়ের সিগন্যাল বাতি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাকি ২৫টি মোড়ের বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এতে ওই সময় খরচ হয় দেড় কোটি টাকা। ২৫টি মোড়ের মধ্যে ১০টিতে ১৫ ওয়াটের এলইডি এবং ১৫টিতে ৫০ থেকে ১০০ ওয়াটের হ্যালোজেন বাতি লাগানো হয়েছিল। সেই বাতিগুলোও এখন পুরোপুরি অকার্যকর। এ অবস্থায় নগরের ট্রাফিক পুলিশ আবার নতুন করে সিগন্যাল বাতির ব্যবহার শুরু করেছে। সিটি করপোরেশন এতে সহযোগিতা করছে।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, সাত–আট বছর ধরে হাতের ইশারায় ট্রাফিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। নগরের বড় জংশনগুলোতে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়েছে। সিগন্যাল বাতি দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হলে জনবলও কম লাগবে।