কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

১২ জন গ্রাহকের ৭৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কৃষি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তাকে গতকাল সোমবার রাতে আটক করেছে পুলিশ। তিনি জামালপুরের মেলান্দহ বাজার শাখা কৃষি ব্যাংকের দ্বিতীয় কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান।

ব্যাংকটির ময়মনসিংহ বিভাগীয় অডিট কর্মকর্তা পান্না লাল কর্মকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কৃষি ব্যাংক মেলান্দহ বাজার শাখায় গিয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পায়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ব্যাংকে গিয়ে জানা যায়, মো. রফিকুল ইসলাম নামের দুবাইপ্রবাসী এক ব্যক্তির মেলান্দহ শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। গত রোববার সকালে ওই ব্যক্তি তাঁর হিসাবে মোট কত টাকা জমা আছে, তা জানতে চান। ব্যাংক থেকে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর হিসাবে কোনো টাকা নেই। ওই ব্যক্তির হিসাবে তাঁর ২১ লাখ টাকা জমা থাকার কথা। হিসাবে কোনো টাকা নেই শুনে ওই দিন বেলা দুইটার দিকে তিনি মেলান্দহ কৃষি ব্যাংক বাজার শাখায় যান এবং লিখিতভাবে বিষয়টি ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলামকে জানান।
এ সময় শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের কাছে বিষয়টি জানতে চান। ওই গ্রাহকের হিসাবে কোনো টাকা না থাকার বিষয়ে মাসুদুর রহমান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদুর রহমানকে ব্যাংকের স্টোর রুমে আটকে রাখা হয়। পরে আরও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের হিসাবে টাকার বড় অঙ্কের গরমিল ধরা পড়ে।

বিষয়টি কৃষি ব্যাংকের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে জানানো হয়। গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক মো. দিদারুল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে চার সদস্যদের একটি দল মেলান্দহে পৌঁছে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক তদন্তকাজ শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ব্যাংকটির দ্বিতীয় কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১২ জন গ্রাহকের হিসাব থেকে ৭৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা অন্য কোনো ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করে তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে নিশ্চিত হন ওই কর্মকর্তারা।

কৃষি ব্যাংক মেলান্দহ বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত মার্চ মাসে মাসুদুর রহমান এই শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রথম দিকে হিসাবের কোনো গরমিল ধরা পড়েনি। গত রোববার একজন গ্রাহকের মাধ্যমে বিষয়টি আমার নজরে আসে। এই বছরের ৩০ মে থেকে এই মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকের ১২ জন গ্রাহকের হিসাব থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচটি হিসাবে ৭৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা অনলাইনের মাধ্যমে স্থানান্তর করেন এবং ওই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। প্রাথমিক তদন্তে এসব টাকার অঙ্ক বের হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে। এতে পুরো বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে। তবে যেসব গ্রাহকের টাকা বেহাত হয়েছে, ব্যাংক ওই সব গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবে। এ ব্যাপারে আমি নিজে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি এবং মাসুদুর রহমানকে থানায় সোপর্দ করেছি।’

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খান বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেটি আমরা সাধারণ ডায়েরিতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। কারণ, এই অভিযোগটি দুদক তদন্ত করবে। অভিযোগটি আমরা দুদকের টাঙ্গাইল কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি। পুরো মামলার বিষয়টি দুদকের। আসামিকে আমরা দুদকের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাব।’