তিন মাসের মধ্যে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের পটিয়ার চারটি গ্রামকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণার বিষয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার কয়েক দফা নির্দেশনাসহ এই রায় দেন।

চারটি গ্রাম হচ্ছে, পটিয়া উপজেলার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের চর কানাই, হুলাইন, পাচুরিয়া ও হাবিলাস দ্বীপ। চার বছর আগে জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ওই রায় দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের পানি আইনের অধীনে কোনো এলাকাকে পানি সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণার আরজি জানিয়ে এটিই দেশে প্রথম আইনি কার্যক্রম বলে জানিয়েছেন বেলার প্রধান নির্বাহী ও আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আদালত ওই চার গ্রামবাসীদের অব্যাহতভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পানি, স্বাস্থ্য, কৃষি ও স্থানীয় সরকার সচিব, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিবাদীদের প্রতি ওই নির্দেশ দেওয়া হয়।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, আটটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে ওই চার গ্রামে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বসানো ৩৫০টি টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়ে। এতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়ে। আটটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগেরই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই ও বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান ছাড়া পরিচালিত হচ্ছিল। শিল্প বর্জ্য খালে ও কৃষিজমিতে ফেলা হচ্ছিল। সৃষ্ট দূষণে গ্রামবাসী সুপেয় পানির পাশাপাশি চাষাবাদের পানি সংকটে পড়ে।

এ প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের জানুয়ারি বেলা হাইকোর্টে একটি রিট করে। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নে অবস্থিত আটটি প্রতিষ্ঠানের শিল্প ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বসানো গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিষ্ঠানের শিল্পবর্জ্য খালে ও কৃষি জমিতে ফেলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি চলমান তদারকিতে থাকবে বলে রায়ে বলা হয়।

আদালতে বেলার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এ কামাল, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আহসানুল করিম, মেজবাহুর রহমান ও ফারজানা খান।

আট প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি (ফুড প্রডাক্টস) ও বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি (মিনারেল ওয়াটার), আম্বিয়া নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড, আম্বিয়া পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড, মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড, আনোয়ার পেপার মিলস ও শাহ আমানত নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড।

হাইকোর্ট ওই আট শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দূষণের পরিমাণ খতিয়ে দেখে আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণ আদায় করতেও বলা হয়েছে।

রায়ের পর আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওই চারটি গ্রামে বিকল্প পানির ব্যবস্থা না করে ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে কোনো ‘লাল’ ও ‘কমলা-খ’ শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না বলে রায়ে এসেছে। পটিয়া উপজেলায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া ও কার্যকর বর্জ্য শোধনাগার প্ল্যান্ট ছাড়া কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে পরিচালিত না হয়, তাও নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ প্রতিপালনের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি স্মারক প্রস্তুত করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।