ধান-চালের দাম বাড়ায় বিপাকে মানুষ

চুয়াডাঙ্গায় হাটবাজারগুলোতে ধান-চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে প্রতি মণ (৪০ কেজি) চালের দাম ৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারির এই দামের প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল তিন থেকে চার টাকা ও সরু চাল আট টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালকল মালিকদের দাবি, ধানের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাল উৎপাদনের খরচও বেড়ে গিয়েছে। প্রতি মণ মোটা ধান ৫০ থেকে ৭০ এবং সরু ধান ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। চাল উৎপাদনের পর খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে। আবার মূল্যবৃদ্ধির পর চালের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে আসায় উৎপাদিত চাল নিয়ে তাঁরা বিপাকে রয়েছেন।

চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, সরকার চলতি আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়ার পর বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি চালের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে হিসাব মেলাতে পারছেন না। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না কিনেই অনেকেই বাড়ি ফিরছেন।

জজেলার অন্যতম প্রধান চালের মোকাম সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ এবং চুয়াডাঙ্গা শহরের স্টেশনসংলগ্ন চালপট্টি ও বড়বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোকামগুলোতে সরু চালের দাম ২৫ কেজির বস্তায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে মিনিকেট বিক্রি হতো ৯৫০ টাকা, তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকায়। আগে বাসমতী প্রতি বস্তা বিক্রি হতো ১ হাজার ৫০ টাকা, তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা । ব্রি-২৮ পুরোনো আগে বিক্রি হতো ৮৫০ টাকা, তা বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা। মোটা চাল হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা (৫০ কেজির বস্তা) আগে ১ হাজার ২৫০ টাকা, বর্তমানে ১ হাজার ৩৫০ এবং খাটোবাবু আগে ১ হাজার ৪০০, বর্তমানে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার চালপট্টিতে খুচরা দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারের তুলনায় কেজিপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজারের খুচরা বিক্রেতা মাসুম হোসেন জানান, পাইকারি কেনার ওপর খুচরা দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ানো বা কমানো কোনো কিছুতেই খুচরা বিক্রেতাদের কিছুই করার থাকে না। দৃশ্যত প্রতি কেজিতে এক টাকা লাভ দেখা গেলেও আড়ত থেকে দোকানে চাল পৌঁছাতে পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ পয়সা খরচ হয়ে থাকে।

সরোজগঞ্জ মোকামের চাল উৎপাদনকারী জহুরুল ইসলাম জানান, গত দুই থেকে তিন সপ্তাহে ধানের দাম প্রতি মণে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাড়তি দামে ধান কিনে কম দামে চাল বিক্রি সম্ভব নয়। এক মণ বাসমতী ধানের দাম ছিল ৮০০ টাকা। এখন তা বেড়ে ১ হাজার ১০০ টাকা। একইভাবে মিনিকেটে ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা, আটাশ ৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা এবং স্বর্ণা ৬২০ টাকা বেড়ে ৬৭০ থেকে ৬৮০ টাকা হয়। তিনি বলেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বেড়ে গিয়েছে।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুল্লা শেখ বলেন, প্রতিবছরই এ সময় চিকন চালের মূল্যবৃদ্ধি পায়। তবে মোটা চালের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে।’