অ্যাপ দিয়ে কেনা হবে ধান

চলতি মৌসুমে যশোরে আমন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ২০ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চলবে। এবার কিছুটা ভিন্ন পদ্ধতিকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সাতটিতে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে তাঁদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে। আর একটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণে অ্যাপসের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে যশোর জেলায় ১৫ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন, শার্শা উপজেলা ২ হাজার ৩৫৩, মনিরামপুর উপজেলায় ২ হাজার ৪৭৪, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৮৭৭, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৯৮৩, চৌগাছা উপজেলায় ১ হাজার ৮৬৮, কেশবপুর উপজেলায় ১ হাজার ১২ এবং অভয়নগর উপজেলায় ৮৩৭ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। ২০ নভেম্বর ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চলবে। ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনা হচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৬টি জেলার ১৬টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণে এবার ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যশোর জেলার সদর উপজেলা রয়েছে। অন্য উপজেলাগুলো হলো ঝিনাইদহ সদর, ঢাকার সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, নওগাঁ সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, হবিগঞ্জ সদর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোর সদর উপজেলার এই পদ্ধতিতে ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। একজন কৃষককে মুঠোফোনে ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামের ওই অ্যাপ নামিয়ে (ডাউনলোড) করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর ধানের নাম, জমির পরিমাণ, কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে চান, তা জানিয়ে ঘরে বসেই সরকারের কাছে ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন কৃষক। নিবন্ধন, বিক্রয়ের আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদসম্পর্কিত তথ্য এবং বিক্রয়ের জন্য কোন তারিখে, কোন গুদামে যেতে হবে, সেসব তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে কৃষক জানতে পারবেন। আবেদনকারী বেশি হলে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হবে। তবে কৃষকের স্মার্টফোন না থাকলে ইউনিয়ন তথ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়ে তিনি এ সেবা নিতে পারবেন। এ পদ্ধতি সফল হলে আগামী বোরো মৌসুমে একই প্রক্রিয়ায় সারা দেশের কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ করা হবে।

কৃষকদের অ্যাপটি সম্পর্কে ২৫ নভেম্বর থেকে ব্যাপক প্রচার শুরু হয়েছে। এ জন্য এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও মসজিদ ও মন্দিরে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষককে মুঠোফোনে ‘কৃষকের অ্যাপ’টি নামিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। আগামী ৮ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যম কৃষক অনলাইনে আবেদন করবেন। ১৭ ডিসেম্বর আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর লটারির মাধ্যম কৃষক নির্বাচন করা হবে। সূত্র জানায়, জেলার অবশিষ্ট সাতটি উপজেলায় এবার লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হচ্ছে। তিন শ্রেণির—ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় কৃষক নির্বাচন করা হচ্ছে। যেসব কৃষকের জমির পরিমাণ ৫০ থেকে ১৪৯ শতকের মধ্যে, তাঁরা ক্ষুদ্র কৃষক, যাঁদের জমির পরিমাণ ১৫০ থেকে ২৪৯ শতক, তাঁরা মাঝারি কৃষক, আর ২৫০ শতকের বেশি জমির মালিকেরা বড় কৃষক। উপজেলার মোট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র, ৩০ শতাংশ মাঝারি এবং ২০ শতাংশ বড় কৃষক ধান সরবরাহ করতে পারবেন।

যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের তথ্যসেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের এটুআই (অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন) থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। তা ছাড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। ২৪ নভেম্বর যশোর সদর ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩৫ জন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সমন্বয়ে আমাদের একটি প্রশিক্ষণ হয়েছে। যদি কোনো কৃষক সরাসরি ধান বিক্রির এই অ্যাপ সম্পর্কে অবহিত না থাকেন, তাহলে আমাদের কাছে এলে তাঁদের ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রিতে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।’

এ বিষয়ে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. লিয়াকত আলী বলেন, চলতি আমন ধান সংগ্রহ অভিযানে জেলার সাতটি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে তাঁদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে। যশোর সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি ‘কৃষকদের অ্যাপ’–এর মাধ্যমে ধান কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এই পদ্ধতিতে উপজেলার কৃষকেরা আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। এ জন্য তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন নম্বর লাগবে, আর পাসওয়ার্ড দেবে সরকার। আগামী ৮ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁরা অবেদন করতে পারবেন। ১৭ ডিসেম্বর লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হবে। সরকার কার কাছ থেকে কী পরিমাণ ধান সংগ্রহ করবে, তা তাঁদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে যশোর সদর উপজেলায় ধান কেনা শুরু হবে।’