জনপ্রিয় হচ্ছে খাঁচায় মাছ চাষ

বাঁশের তৈরি খাঁচা ভাসিয়ে রাখা হয়েছে নদের ধারে। তাতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। ছয় মাস পর বড় হলে বিক্রি হবে স্থানীয় বাজারে। সম্প্রতি পাবনার ফরিদপুরের বড়াল নদে।  ছবি: প্রথম আলো
বাঁশের তৈরি খাঁচা ভাসিয়ে রাখা হয়েছে নদের ধারে। তাতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। ছয় মাস পর বড় হলে বিক্রি হবে স্থানীয় বাজারে। সম্প্রতি পাবনার ফরিদপুরের বড়াল নদে। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। মাছের পোনা ও খাবার কিনতে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পরে খাঁচায় পোনা ভরে তা ভাসিয়ে রাখা হয় নদীতে। প্রতি খাঁচায় পোনা ছাড়া যায় ৭০ হাজার। ছয় মাস পর এই মাছ বড় হয়। পরে তা বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে।

ভাসমান পদ্ধতিতে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষে খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে অন্তত ৩০ হাজার টাকা। ফলে সম্প্রতি পাবনার বিভিন্ন নদ-নদীতে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন স্থানীয় বেকার যুবকেরা।

পাবনার বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় মৎস্যচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরেই জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে গুমানী নদীর চাটমোহর অংশে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ হতো। দিন দিন অন্য এলাকার মৎস্যচাষিরাও বিষয়টি রপ্ত করছেন। 

বর্তমানে জেলার চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলার বড়াল, গুমানী, বেড়া উপজেলার হুড়াসাগর ও সুজানগর উপজেলার পদ্মাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে।

সরেজমিনে ফরিদপুর উপজেলার গুমানী নদী ও বড়াল নদ ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে ভাসছে শত শত খাঁচা। তাতে নীরবেই বেড়ে উঠছে বিভিন্ন
প্রজাতির মাছ। মৎস্যচাষিরাও ব্যস্ত মাছের পরিচর্যা ও খাবার দিতে।

মৎস্যচাষিদের দাবি, স্বল্প পরিসর ও অল্প ব্যয়ে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। প্রতিটি খাঁচা হয় ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের। খরচ হয় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। প্রতিটি খাঁচায় প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ তেলাপিয়া, কইসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করা যায়। নদীতে খাঁচা ভাসিয়ে তাতে মাছ ছেড়ে দেওয়া হয়। স্রোত থাকায় মাছের রোগ হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।

ফরিদপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান (৪০) মাছ চাষ করেন বড়াল নদে। তিনি জানান, প্রথমে তিনি চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে এই পদ্ধতি দেখেন। পরে নিজে বিষয়টি রপ্ত করেন। ২০১০ সালে মাত্র ১০টি খাঁচা দিয়ে শুরু করেন মাছ চাষ। এরপর থেকে তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে শতাধিক খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠানে পেয়েছেন সেরা মৎস্যচাষির পুরস্কার। তাঁর দেখাদেখি উপজেলার অনেক বেকার যুবকও মাছ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও জানান হাফিজুর।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুর রউফ বলেন, খাঁচায় মাছ চাষ করে জেলার অনেক যুবক অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেকার যুবকদের সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে।