চাষির গোলা খালি হলে শুরু হয় ধান কেনা

চলতি মৌসুমে ২০ নভেম্বর ধান কেনা শুরুর ঘোষণা থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ে এখনো তা হয়নি। নিয়ম রক্ষার খাতিরে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত শুধু হরিপুর উপজেলার দুজন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে কৃষকের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় কেনা শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

কৃষকেরা বলছেন, খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার প্রতিবছর ধান কিনলেও চাষিরা এতে খুব একটা লাভবান হচ্ছেন না। কারণ, কৃষকের গোলা শূন্য হলে শুরু হয় ধান কেনা। এতে ফড়িয়া-ব্যবসায়ীরাই লাভবান হন। তাই চাষিবান্ধব ক্রয়সূচি চান তাঁরা।

সদর উপজেলার ঢোলারহাট গ্রামের কৃষক অশেষ রায় বলেন, গত বছর সরকারিভাবে ধান কেনায় প্রকৃত কৃষক লাভবান হননি। কারণ, যখন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়, তখন তাঁদের হাতে ধান ছিল না। এবারও গত বছরের মতো অবস্থা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) সভায় চলতি আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার ঘোষণা দেয় সরকার। এতে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৬ হাজার ২০২ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। ১৩ নভেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছাম্মৎ নাজমানারা খাতুন চিঠি দিয়ে ধান কেনা উদ্বোধন করতে বলেন। একই দিন খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক জুলফিকার রহমান ধান কেনার প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ করে চিঠি দেন। পরদিন ১৪ নভেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আনিছুর রহমান বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেন। চিঠিতে ২০ নভেম্বর ধান কেনা শুরুর কথা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত তা করতে পারেনি ঠাকুরগাঁও খাদ্য বিভাগ। নিয়ম রক্ষার খাতিরে শুধু হরিপুরের দুজন কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে।

বাছাই না করেই কীভাবে ওই দুজনের কাছ থেকে ধান কেনা হলো—এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি হরিপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা রেজাউল হক খন্দকার।

এ উপজেলার চৌরঙ্গী এলাকার কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘হরিপুরে এখনো চাষিদের লটারি হয়নি। তা না হলেও সরকারি গুদামে দুজন কৃষকের ধান নিয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন দেখানো হয়েছে। কবে থেকে ধান কেনা শুরু হবে, তা বলতে পারছি না।’

কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের অধিকাংশ কৃষক নিম্নবিত্ত। মৌসুম এলে তাঁরা ধারদেনা করে আবাদ করেন। ফসল কাটা-মাড়াই শেষ হলেই তা বেচে মহাজনের ধারদেনা পরিশোধ করেন। অনেকে ধান বিক্রি করে আলুর আবাদ শুরু করেছেন। এ অঞ্চলে আমন ধান মাড়াই শুরু হয়েছে নভেম্বরের শুরুতে। এখন বেশির ভাগ প্রান্তিক কৃষকের গোলায়ই ধান নেই। এ অবস্থায় ধান কিনলে প্রান্তিক কৃষকের কোনো লাভ হবে না। এ জন্য মৌসুমের শুরুতে ক্রয়কেন্দ্র খুলে দ্রুত কৃষকের ধান কিনতে হবে।

সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের বাবুল ইসলাম বলেন, ‘মহাজনের কাছে থেকে ঋণ করে ধান করেছি। ধান উঠলেই টাকা দিতে হবে। সরকার যদি এ মুহূর্তে ধান নিত, তাহলে হয়তো কিছু টাকা পাইতাম। মহাজনদেরটাও শোধ হইতো, আমারও কিছুটা হইতো। কিছুদিন পরে তো আমাদের ধান থাকবে না। তখন তো ধান থাকবে ব্যবসায়ীদের কাছে। তাতে লাভ হবে না।’

জানতে চাইলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, কৃষকের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে সময় লেগেছে। প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। কেবল লটারি বাকি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে কেনা শুরু হয়ে যাবে।