আহছানউল্লা স্বর্ণপদক পেলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান

শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে আজ শনিবার ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে আজ শনিবার ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে আজ শনিবার ‘খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিরা জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন জনসেবামূলক কাজ তথা দরিদ্র ও সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। …আশা করি সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ এ রকম জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসবেন।’

রাজধানীর আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এইচ খান মিলনায়তনে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ওই স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে ওই স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘তিনি শুধু একজন স্বনামধন্য অধ্যাপকই নন, তার জ্ঞানগর্ভ ও অভিজ্ঞতালব্ধ গবেষণা, মৌলিক প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা এবং সম্পাদিত বহু গ্রন্থ তাঁকে পাঠকসমাজে করেছে নন্দিত। তাঁর সাহিত্যকর্ম সর্বজনবিদিত; তাঁর পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা দেশ ও দেশের বাইরে পরিব্যাপ্ত। আমি এই জীবন্ত কিংবদন্তিকে ব্যক্তিগতভাবে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে বলা যায় জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একটি প্রতিষ্ঠান।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটা যান্ত্রিক
আহ্ছানিয়া মিশনসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘আমি জীবনে যেটুকু অর্জন করতে পেরেছি, তা আপনাদের সমাদর লাভ করেছে, সে জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমরা যখন শিক্ষকতায় প্রবেশ করেছিলাম তখন উচ্চ শিক্ষা অঙ্গনের পরিবেশ আজকের চেয়ে অনেক ভিন্ন ছিল। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে একটা গভীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করা তখন সম্ভবপর হতো। ছাত্র ও শিক্ষকদের অনুপাত খুব অনুকূল ছিল। ক্লাসে ও বাইরে শিক্ষকেরা ছাত্রদের জন্য সময় দিতে প্রস্তুত থাকতেন, তাদের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের বই পড়তে দিতেন এবং ছাত্রদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার দিকে নজর রাখতেন। অনেক ছাত্ররা আমাদের সময় পরীক্ষার ফি দিতে পারছে না, কোনো না কোনো শিক্ষক তা করে দিয়েছেন। এ রকম একটি পরিবেশের মধ্যে আমরা কাজ করেছি।’

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘কিন্তু আজকে মনে হয় যে, এই ব্যক্তিগত যোগাযোগের কিছু আর তেমন অবশিষ্ট নেই। ফলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটা খুবই যান্ত্রিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। শিক্ষককে দেখলে ছাত্র সালাম দেয় বটে; মন থেকে করে না, যান্ত্রিকভাবে করে। এই যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে একজনের চরিত্রের বিকাশ ঘটে, শিক্ষকের এই প্রভাব তার মধ্যে কাজ করে না। এটি খুব মূল্যবান ব্যাপার। আমরা এটি থেকে অনেকখানি সরে এসেছি। আমি আশা করি, সাম্প্রতিককালে উচ্চশিক্ষার অঙ্গন নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, তার সমাধান করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাব এবং যথার্থ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে পারব।’

এর আগে প্রধান বিচারপতি অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের হাতে ক্রেস্ট, সনদ, দুই লাখ টাকার চেক ও বই তুলে দেওয়া হয়।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক ড. এস এম খলিলুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ ও রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ বক্তব্য দেন।

আয়োজকেরা জানান, সমকালীন কৃতি ব্যক্তিদের প্রতিভা ও অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ের একজন কৃতি ব্যক্তিত্বকে খান বাহাদুর আহছানউল্লা স্বর্ণপদক দিয়ে আসছে। আজ শনিবার পর্যন্ত ২৭ জনকে ওই পদক দেওয়া হয়েছে।