খুনের আগে মাহাবুবকে খাওয়ানো হয় ৩০টি ঘুমের ওষুধ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে খুন হওয়া রেলওয়ের কর্মচারী মাহাবুবুর রহমান।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে খুন হওয়া রেলওয়ের কর্মচারী মাহাবুবুর রহমান।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাহাবুবুর রহমান (৩৫) নামে রেলওয়ের এক কর্মচারী খুনের ঘটনায় তাঁর স্ত্রী রোকসানা আক্তার (৩০) ও চাচাতো ভাই হাসিব মিয়াকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, হাসিবের সঙ্গে রোকসানার প্রেমের সম্পর্কের কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যার আগে পায়েসের সঙ্গে মাহাবুবকে ৩০টি ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়।

মাহাবুব বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের এসএস ফিটার পদে কর্মরত ছিলেন। এক যুগ আগে মাহাবুব-রোকসানার বিয়ে হয়। তাদের তিন সন্তান।

মাহাবুব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল আলম খান আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গতকাল শনিবার সকালে পুলিশ হাসিবকে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে হাসিব হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। হাসিবের দেওয়া তথ্য মতে, গতকাল রাতে বাড়ির কাছে একটি কচুখেত থেকে হত্যার সময় তাঁর পরনের রক্তমাখা শার্ট ও প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। হাসিব উপজেলার শিমুলকান্দি ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। গতকাল রাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

একই সঙ্গে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিহত মাহাবুবের স্ত্রী রোকসানাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাসিবের পর রোকসানাও হত্যার দায় স্বীকার করেন বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা বাহালুল আলম খান বলেন, শুরু থেকেই নিহতের স্ত্রীকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। আর মুঠোফোনের সূত্র ধরে হাসিবকে শনাক্ত করা হয়। হাসিব রোকসানার সঙ্গে প্রেমের কথা স্বীকার করেন। তাঁরা মনে করেছিলেন, মাহাবুবকে সরিয়ে দিতে পারলে তাদের পথের বাধা দূর হয়ে যাবে। এরপরই তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন দুজনে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রোখসানা তাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে পায়েসের সঙ্গে ৩০টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে মাহাবুবকে খাওয়ানো হয়। রাত তিনটার দিকে তিনি দরজা খুলে দিলে হাসিব ঘরে ঢোকেন। পরে মাহাবুবকে হত্যা করা হয়।

মামলার বাদী হাবিবুর রহমান নিহত মাহাবুবের বড় ভাই। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সরেজমিন পত্রিকার জ্যেষ্ঠ নিজস্ব প্রতিবেদক।

মামলার বাদী বলেন, ‘ঘটনার দিন থেকেই রোকসানাকে ঘিরে আমাদের সন্দেহ জাগে। তবে হাসিব এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, এমন ধারণা ছিল না। এখন আমাদের সন্দেহ, এই ঘটনার সঙ্গে হাসিবের মা জড়িত থাকতে পারেন। শুধু এতটুকু জানতে পারি, বাড়ির কাছে মাহাবুব একটি জমি কেনেন। এই নিয়ে হাসিবের সঙ্গে মাহাবুবের মতবিরোধ ছিল।’

হাসিবের মা সেলিনা আক্তার বলেন, ‘রোকসানা আমাদের ঘরে আসা যাওয়া করত। আমার ছেলের সঙ্গে কথা-বার্তা বলত। তাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে, এমন সন্দেহ কখনো করিনি। ঘটনার রাতে মাহাবুবের ১০ বছর বয়সী ছেলে আজিজুল হক এসে তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে এবং বলে যে তার বাবাকে ডাকাতেরা মেরে ফেলেছে। তখন আমরা সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাই। আমাদের সঙ্গে হাসিবও গিয়েছিল।’