টোল আদায়ে অনড় সওজ

গাইবান্ধা
গাইবান্ধা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বড়দহ সেতুর টোল আদায়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। টোল আদায়ে সওজ দরপত্র আহ্বান করার পর ঠিকাদার নিয়োগও সম্পন্ন করেছে। কিন্তু জনগণের বাধার মুখে ঠিকাদার টোল আদায় করতে পারছেন না। ফলে তিন বছর ধরে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে গাইবান্ধা-নাকাইহাট-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে করতোয়া নদীর ওপর ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে বড়দহ সেতু নির্মিত হয়। ওই বছরের ২০ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করেন। ওই দিন থেকে সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

সূত্রটি জানায়, ২০১৪ সালের টোল আদায়ের নীতিমালা অনুযায়ী, যে সেতুর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটারের বেশি, সেগুলো থেকে টোল আদায় করতে হবে। বড়দহ সেতু টোলের আওতায় পড়েছে। টোল আদায়ের জন্য ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু সেবার দরপত্রে কেউ অংশ নেয়নি। এভাবে আট দফায় দরপত্র আহ্বান করেও কোনো ঠিকাদার পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট নবমবার দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার পাওয়া যায়। ওই বছরের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরের জন্য টোল আদায়ে ঠিকাদার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে চুক্তি হয়। এক বছরে ইজারার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১২ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা। ঠিকাদার দায়িত্ব পেয়ে টোল আদায়ের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু টোল আদায়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এলাকার লোকজন ঝাড়ুমিছিল করেন। সেতুর ওপর মিছিল সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। দাবি আদায়ে গঠিত হয় বড়দহ সেতুর টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটি।

জনগণের আন্দোলনের মুখে টোল আদায় বন্ধ থাকে। ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সাংসদ আবুল কালাম আজাদ সড়কমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বড়দহ সেতুর টোল মওকুফ করার আবেদন করেন। এরপর সড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব টোলের বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে গাইবান্ধা সওজ বিভাগকে চিঠি দেয়। গাইবান্ধা সওজ ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি সচিবকে চিঠির জবাব দেন। চিঠিতে ঠিকাদারের টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে টোল মওকুফের সুপারিশ করা হয়।

সওজ বিভাগ এই সুপারিশের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবগত করে। অর্থ মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট টোল মওকুফ করা যাবে না মর্মে সড়ক মন্ত্রণালয়কে জানায়। এরপর সড়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি গাইবান্ধা সওজকে চিঠি দিয়ে জানায়। সড়ক বিভাগ ওই বছরের ২৫ অক্টোবর টোল আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। কিন্তু এরপরও টোল আদায়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার টোল আদায় করতে না পেরে চলতি বছরের ১৯ মে সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেন। গত ২৫ জুন সড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব টোল আদায়ের বিষয়ে মতামত চেয়ে পুনরায় গাইবান্ধা সওজকে চিঠি দেয়। গাইবান্ধা সওজ গত ৪ আগস্ট ঠিকাদারের টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে আবার টোল মওকুফের সুপারিশ করে। এরপর মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২ অক্টোবর টোল আদায়ের বিষয়ে সভা করে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টোল আদায়ের জন্য ১০ অক্টোবর গাইবান্ধার ডিসিকে চিঠি দেওয়া হয়। ১৯ নভেম্বর গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাংসদ মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোবিন্দগঞ্জে টোল আদায়সংক্রান্ত সভা হয়।

মনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বড়দহ সেতুর টোল মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। সিদ্ধান্ত পেলে টোল আদায়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বড়দহ সেতুর টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বড়দহ সেতুর আশপাশে গরিব লোকজনের বাস এবং সেসব নদীভাঙন এলাকা। এখানকার মানুষের টোল দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এ ছাড়া সেতুর কাজ ১৮ বছরে সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যয় বেড়েছে। শুধু তা–ই নয়, প্রতিবছর নদীভাঙনের কারণে সেতুর দৈর্ঘ্য বেড়েছে। ফলে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন টোল আদায়ের প্রশ্ন উঠেছে। এখানে টোল আদায় করতে দেওয়া হবে না। তারপরও টোল আদায় শুরু করা হলে জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সরকার যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, সেখানে ছোট্ট একটি সেতুর টোল না নিলে কী হবে?’

ঠিকাদারের প্রতিনিধি সাজু মিয়াবলেন, তাঁরা নীতিমালা মেনেই ইজারা নিয়েছেন। মূল্যও পরিশোধ করেছেন। তারপরও তিন বছর ধরে টোল আদায় করতে পারছেন না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, টোল আদায় নতুন কোনো বিষয় নয়। সেতুটি বাস্তবায়নের আগে নৌকাযোগে বড়দহ খেয়াঘাট থেকে নদী পারাপার হতে টোল নিত গাইবান্ধা জেলা পরিষদ।

গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, সেতুতে টোল আদায়ের নীতিমালা অনুযায়ী বড়দহ সেতুর টোল আদায় করতে হবে। তাই বড়দহ সেতুতে টোল আদায়ের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁরা।