দিয়া-রাজীবের মৃত্যুর মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন, দুজন খালাস

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দুই চালক ও এক সহকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই ঘটনায় বাসমালিক ও এক সহকারী খালাস পেয়েছেন।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস আজ রোববার বিকেলে আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া তিন ব্যক্তি হলেন দুই বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও জোবায়ের সুমন এবং চালকের সহকারী আসাদ কাজী। আসাদ পলাতক।

খালাসপ্রাপ্ত দুই ব্যক্তি হলেন বাসমালিক জাহাঙ্গীর আলম ও চালকের সহকারী এনায়েত হোসেন।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে এই মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাসচালক মাসুম বিল্লাহ। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাসচালক মাসুম বিল্লাহ। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

গত ১৪ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। সেদিন বিচারক ইমরুল কায়েস রায় ঘোষণার জন্য ১ ডিসেম্বর (আজ) দিন ধার্য করেন।

সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল জানান, এই মামলায় মোট ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৩৭ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হয়।

নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)।

এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।

দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। প্রথম আলো ফাইল ছবি
দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। প্রথম আলো ফাইল ছবি

গত বছরের সেপ্টেম্বর জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে ঢাকার আদালতে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অভিযোগপত্র দেন ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। ছয় আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

ছয় আসামি হলেন জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জোবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ। তাঁদের মধ্যে আসাদ পলাতক। আর বাসমালিক শাহাদাত জামিনে আছেন।

অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান মালিক শাহাদাত হোসেন। তাঁর পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলে।

বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে যে ধারায় (দণ্ডবিধির ৩০৪-খ) মামলা করেছিলেন, তা ছিল বেপরোয়া যান চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ। এই ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড। তবে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ঢাকাসহ সারা দেশে ঘাতক বাসচালক ও চালকের সহকারীদের বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাসচালক জোবায়ের সুমন। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া বাসচালক জোবায়ের সুমন। মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা, ১ ডিসেম্বর। ছবি: দীপু মালাকার

গত বছরের ১ আগস্ট পুলিশ মামলার ধারা সংশোধন চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে। আদালতকে পুলিশ জানায়, তদন্ত করে দেখা গেছে, ঘটনার দিন বাসে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল ছাত্রছাত্রীরা। জখমের মাধ্যমে মৃত্যু হতে পারে জেনেও জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক ও চালকের সহকারীরা তাদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার অপরাধ করেছেন। এ ধরার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।