চাল-পেঁয়াজের সরকারি তথ্য নিয়ে প্রশ্ন

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের কৃষি, খাদ্য এবং দারিদ্র্য নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর দেওয়া তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলম। কৃষি মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের খাদ্য উৎপাদন নিয়ে যেসব তথ্য দেয় তার সঙ্গে বাস্তবতার অনেক কিছু মেলে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর বার্ষিক গবেষণা সম্মেলন বা রিসার্চ আলমানেক-২০১৯ এ রোববার এসব কথা বলেন শামসুল আলম। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে দেশের খাদ্য, কৃষি, তৈরি পোশাক খাত, ওষুধ শিল্পসহ নানা দিক নিয়ে সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। দুই দিনের সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে সোমবার।

শামসুল আলম বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী দেশে চালের উৎপাদন তিন কোটি ৬০ লাখ টন। আর মাথাপিছু মানুষের চাল খাওয়ার পরিমাণ যোগ করলে বছরে তিন কোটি টনের বেশি চাহিদা থাকার কথা। এই হিসাব আমলে নিলে দেশে ৬০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। তাতে বাংলাদেশ তো বিদেশে চাল রপ্তানি করতে পারে। তবে বাস্তবে বাংলাদেশ কয়েক বছর পর পর ১০-২০ লাখ টন চাল আমদানি করে।

পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদা নিয়ে শামসুল আলম বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ২২ লাখ টন। আর চাহিদা ২৪ লাখ টন। জোগান ও চাহিদার মধ্যে মাত্র দুই লাখ টনের পার্থক্য থাকার পরেও বাজারে হঠাৎ করে পেঁয়াজের এত বড় সংকট কেন দেখা দিল? তিনি বলেন, দেশের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হচ্ছে কৃষি খাত। কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেশের কৃষি পরিবারগুলোর ৮৩ শতাংশের কৃষি ছাড়াও অন্য অকৃষি খাত থেকে আয় হয়। মাত্র ১৩ শতাংশ পরিবার শুধুমাত্র কৃষি থেকে আয় করে চলে।

অনুষ্ঠানে দেশের চালের বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরেন বিআইডিএস এর জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো নাজনীন আহমেদ। তিনি বলেন, সাধারণত ধান-চালের বাজারে কোনো সংকট হলে সবাই বলে এটা সিন্ডিকেটের কারণে হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় সিন্ডিকেটের ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে চালের বাজারে অটো চালকলগুলো ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। দেশের ২০ শতাংশ ধান-চালের বাজার মাত্র ৫০ টি অটো চালকল প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ধানের মজুত, ধান থেকে চাল ভাঙানোর ক্ষমতা থেকে শুরু করে বাজারে ধান-চাল সরবরাহে তাদের সক্ষমতা বাড়ছে।

নাজনীন আহমেদ বলেন, দেশের মজুত আইন অনুযায়ী চালকলগুলো তাদের ধান ভাঙানোর ক্ষমতার দুই গুণ ধান মজুত করতে পারে। কিন্তু সাড়ে ১২ শতাংশ চালকলের তার চেয়ে বেশি চাল মজুত করার ক্ষমতা আছে। এর বাইরে তাদের নিয়ন্ত্রণে অনেক ধানের ব্যাপারীদের গুদামে ধানের মজুত থাকে। এই মিলগুলোতে কী পরিমাণে ধান-চাল আছে তার হিসাব আইন অনুযায়ী খাদ্য বিভাগের কার্যালয়ে পাঠানোর কথা। কিন্তু বাস্তবে খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে সেসব তথ্য থাকে না। যে কারণে তারা ১০-১৫ দিন চাল কেনা বন্ধ করে দিলে বাজারে সংকট দেখা দিয়ে দাম বেড়ে যেতে পারে। ফলে তাদের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে তদারকি করা উচিত। নয়তো বাজারের বাস্তব পরিস্থিতি ও দাম বৃদ্ধির কারণগুলো জেনে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।

সম্মেলনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু তার পরেও অনেক বছর ধরে দেশে তিন কোটি মানুষ দরিদ্র রয়ে গেছে। এই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমানো বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের বক্তব্যে বিআইডিএস এর মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, দেশের অর্থনীতির নানা সংকট ও সম্ভাবনার দিক তুলে ধরতে বিআইডিএস এসব গবেষণা গুলো করছে। উন্নয়নের বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি আর্থিক খাত নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।