শ্রীপুরে নদের পারে অবৈধ ভাটার সারি

বানার নদের পাশে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। গত বৃহস্পতিবার শ্রীপুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামে।
বানার নদের পাশে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। গত বৃহস্পতিবার শ্রীপুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামে।

বানার নদের কিছু এলাকায় এখনো স্বচ্ছ পানির দেখা মেলে। কিন্তু স্বচ্ছ পানির পাশ ঘেঁষে অনুমোদনহীন ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেশ কয়েক জায়গায় নদের পাশসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি স্থানে ইটভাটা থাকায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, শ্রীপুরে মোট ২২টি ইটভাটা আছে। এর মধ্যে ১৬টির পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। ছাড়পত্র আছে ছয়টির। কিন্তু লাইসেন্স হালনাগাদ আছে মাত্র দুটির।

সম্প্রতি লতিফপুর গ্রামে বানার নদের পারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এলবিএম ব্রিকস, এসবিএম ব্রিকস, এবিএম ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এগুলোর প্রতিটির ৫০০ মিটারের মধ্যে আছে আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইটভাটার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে চারপাশ। আরও কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, এগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশেই গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামে শ্রাবণ ব্রিকস, তালতলি গ্রামে বিএবি ব্রিকস, ভিটিপাড়া গ্রামে জেএম ব্রিকস, আনাস-সাব্বির ব্রিকস, মেসার্স শাহজাহান ব্রিকস, এমএইচবি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকসসহ পুরো উপজেলার অন্যান্য স্থানে ইটভাটাগুলোর ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ভাটাতেই অনুমোদনহীন ছোট চিমনি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

লতিফপুর গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছপালা, গৃহপালিত পশু ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে আশপাশের বাসিন্দাসহ স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর। বরকুল গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এখানে ইটভাটা স্থাপনের ফলে বাতাসে ঝাঁজালো গন্ধ থাকে সব সময়। এতে শিশু ও বৃদ্ধদের সমস্যা হয়। ফসলের উৎপাদন কম হয়। তিনি বলেন, এসব ইটভাটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে স্থাপন করলে এমনটা হতো না। ভিটিপাড়া গ্রামের আজিজুল হক বলেন, কৃষিজমির আশপাশে ইটভাটা থাকায় ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার কারণেই যেখানে-সেখানে ইটভাটা গড়ে উঠছে। এভাবে ভাটা স্থাপন হতে থাকলে পরিবেশ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। একই এলাকার মোহাম্মদ বাদল বলেন, ‘ইটভাটার প্রয়োজন আছে, তবে সেটা আমাদের পরিবেশ নষ্ট করে নয়। এমনিতেই শ্রীপুরে যত্রতত্র কারখানা স্থাপনের ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে ইটভাটা স্থাপন হওয়ায় পরিবেশ আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে।’

বরমী এলাকার বাসিন্দা এএসবি ব্রিকসের মালিক বাবুল আকন্দ বলেন, ‘আমাদের ইটভাটায় পরিবেশদূষণ হচ্ছে না। আমরা পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছিলাম। কিন্তু এখন আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র নবায়ন করে দিচ্ছে না। কিন্তু আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করছি। আমাদের সুযোগ দেওয়া দরকার। সরকারের নীতিমালা মেনেই আমরা ব্যবসা করতে চাই।’ আরেকটি ইটভাটার মালিক শাহজাহান ফকির বলেন, ‘কাগজপত্র নবায়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা পরিবেশের ক্ষতি না করেই ইটভাটা পরিচালনা করছি।’

পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক আবদুস সালাম বলেন, ‘কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই শ্রীপুরে অনেক ইটভাটা চলছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। শিগগিরই তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হবে।’