'সুখবরে' অতিষ্ঠ মানুষ

নালিতাবাড়ীতে সকাল-সন্ধ্যা উচ্চ শব্দে চালানো হয় মাইকে প্রচারণা। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আজ বুধবার শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
নালিতাবাড়ীতে সকাল-সন্ধ্যা উচ্চ শব্দে চালানো হয় মাইকে প্রচারণা। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আজ বুধবার শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

‘সুখবর, সুখবর, সুখবর’ শুনতে শুনতে এখন কান ঝালাপালা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকের উচ্চ শব্দে বাসাবাড়িতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব মো. রুহুল আমিন।

শুধু রুহুল আমিন নন, কোনো নিয়মনীতি না মেনে মাইকের এমন উচ্চ শব্দের আওয়াজে অতিষ্ঠ পৌর শহরের বাসিন্দারা। সচেতন নাগরিক ও শিক্ষার্থীরা এর প্রতিকার চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, মানুষের শ্রবণের জন্য শব্দের ৪৫ ডেসিবেল হচ্ছে সহনীয় মাত্রা। তবে সেটা ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করলে তা ক্ষতিকর। পৌর শহরে যে হারে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হয়, এর ফলে অনেক সময় শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের কাছাকাছি চলে যায়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রবিউল আক্রাম বলেন, উচ্চ শব্দে মাইকিং চলতে থাকলে পর্যায়ক্রমে পৌরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে শ্রবণসমস্যায় ভুগতে হবে।

পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য ও সেবার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাইকিংয়ে নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে রয়েছে নতুন ধান, শাকসবজির বীজ, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রচারণা, কম মূল্যে লাইট বিক্রি, বিশাল গরু-মহিষ জবাই, ঢাকাগামী পরিবহনের স্পেশাল সার্ভিস, মোটরসাইকেলের অফার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোচিংয়ের প্রচারণা। এটা চলে দিন থেকে রাত পর্যন্ত।

বাসিন্দারা বলছেন, একটা এলাকায় প্রচারণায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি প্রচারণা শুরু হতে থাকে। মৌসুমের এই সময়টায় ধর্মীয় সভার প্রচারণাও বেশি। মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে হাসপাতাল, ক্লিনিক, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজের পরিবেশের কিছুই মানা হচ্ছে না। এতে পৌরবাসীর জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

পৌর শহরের তারাগঞ্জ উত্তর বাজারের মনিহারি দোকানের মালিক রতন পাল বলেন, শহরে মাইকের শব্দে দোকানে বসে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাইকের শব্দে মুঠোফোনে ঠিকমতো কথাও বলা যায় না।

শিক্ষার্থী রায়মা মান্নান বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময় না মেনে শহরে প্রতিদিন সুখবরের নামে উচ্চ শব্দে মাইকিং করা হয়। এতে তাঁদের পাঠদানে সমস্যা হয়। একটা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য তাঁর।

পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পৌর শহরে ব্যাপক হারে মাইকিং বেড়েছে। এ নিয়ে অনেকেই তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে দ্রুত বসা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মাইকিং করার জন্য। কারণ, এ সময় তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের স্কুল–কলেজ ও অফিস–আদালতের কাজের চাপ কম থাকে। এই নির্দেশ অমান্য করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।