মুঠোফোন চোর চিনে ফেলায় খুন হন আরিফ

মুঠোফোন চোরদের চিনে ফেলায় পুরান ঢাকায় আরিফ হোসেন (২৩) খুন হন। আরিফ হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গত রোববার তিনজন আসামি ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তাঁরা হলেন মোহাম্মদ রমি (২৫), রুপক ইকবাল (২৫) ও তৌসিফ হোসেন (৩৪)। তিনজনই পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায় বসবাস করেন।

তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, আরিফ হোসেন থাকতেন ওয়ারীর ১৩৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটের একটি বাড়ির পঞ্চম তলার ছাদে। গত ১৩ নভেম্বর রাতে নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে আরিফের কক্ষে ঢোকেন মোহাম্মদ রমি ও রুপক ইকবাল। তাঁরা যখন মুঠোফোন চুরি করছিলেন, তখন আরিফ ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। রমি ও রুপককে চিনে ফেলেন আরিফ। তখন রমি একটা শুকনা বড় ডাল দিয়ে আরিফকে পেটান। রমির সহযোগী রাসেল মুখ চেপে ধরেন। তখন আরিফ চিৎকার করার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে রমি শুকনা ডাল আরিফের বুকের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে হত্যা করেন। এরপর আরিফের মুঠোফোন চুরি করে লাশ সেখানে রেখে পাশের ভবনের কার্নিশ দিয়ে পালিয়ে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওয়ারী জোনাল টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল জুয়েল ঢাকার সিএমএম আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেন, আরিফের মুঠোফোন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পর রমি তা অপর আসামি তৌসিফ হোসেনের কাছে দেন। তৌসিফ এর বিনিময়ে রমিকে আটটি ইয়াবা বড়ি দেন। পরে তৌসিফ ওই মুঠোফোন ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মার্কেটের ফুটপাতে একজনের কাছে চার হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। আসামি রমি জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি আগেও একাধিকবার মুঠোফোন চুরি করে তৌসিফ হোসেনকে দিয়েছিলেন। মুঠোফোনের বিনিময়ে তৌসিফ তাঁকে ইয়াবা দিতেন।

আরিফের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আরা বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় গত ১৩ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।

মামলায় ইয়াসমিন আরা বলেন, খবর পেয়ে তিনি তাঁর স্বামীর কক্ষে ঢুকে দেখেন, লাশ খাটের ওপর চিত অবস্থায় পড়ে আছে। বুকে বিদ্ধ ছিল গাছের একটা ডাল।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি সিগারেটের বাঁট, মেঝেতে থাকা রক্তের সোয়াব, পিংক ও আকাশি রঙের দুটি রক্তমাখা চাদর জব্দ করে। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই হারুন অর রশীদ গত ২৪ নভেম্বর এই আলামতগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন।

এসআই হারুন অর রশীদ আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আরিফ হোসেনের হত্যাকাণ্ডটি ছিল নৃশংস ও ক্লুলেস একটি মামলা। হত্যার নানাবিধ কারণ মাথায় নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। ওয়ারী এলাকার চোরদের তালিকা করা হয়। পরে মামলাটি ডিবিতে যায়। আরিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামি রমি, তৌসিফ ও রুপক গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

নিহত আরিফের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা এলাকায়। পুরান ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।