চার সংগঠনের সম্মেলনে সব নেতা চূড়ান্ত করে দিয়েছে আ.লীগ

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই আওয়ামী লীগের চার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন হলো নভেম্বরে। এর মধ্যে তিনটি সংগঠনের নেতৃত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতারা। আর সবচেয়ে বেশি ভাবমূর্তির সংকটে পড়া যুবলীগের নেতৃত্বে আনা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরের দুজনকে। বিতর্কিত কাউকে নেতৃত্বে না আনার আলোচনা থাকলেও অন্তত দুজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ভোটাভুটি না হলেও কাউন্সিলরদের প্রস্তাবিত নামের মধ্য থেকে চার সংগঠনের সম্মেলনে নয়জন শীর্ষ নেতার নাম চূড়ান্ত করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। আর বাকি আট পদের সব কটিতে একাধিক প্রার্থী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নেতৃত্ব চূড়ান্ত করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সবচেয়ে বেশি বিতর্কের মধ্যে পড়ে যুবলীগ। সংগঠনের একাধিক নেতা গ্রেপ্তার ও বহিষ্কৃত হয়েছেন। কেউ কেউ আত্মগোপনে আছেন। চেয়ারম্যান পদ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। নেতৃত্ব নির্ধারণে ৫৫ বছরের বয়সসীমা বেঁধে দেন প্রধানমন্ত্রী।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামসকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ায় সন্তুষ্ট হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলেন, ফজলে শামস প্রত্যক্ষ রাজনীতি না করলেও তিনি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর ভাবমূর্তি যুবলীগের জন্য সহায়ক হবে। শেখ ফজলে শামস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। এক দশক ধরে তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

শেখ ফজলে শামস প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে মেধাবীদের অনীহা আছে, তাঁদের রাজনীতিতে উৎসাহী করতে চাই। সৎ, ত্যাগী, বঞ্চিতদের নেতৃত্বে আনতে হবে। মেধাবীরা প্রাধান্য পাবেন সংগঠনে। আর ৫৫ বছরের বয়সসীমা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনারও কোনো ব্যত্যয় হবে না।’

>

পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। বিতর্কিতদের জায়গা হবে না নতুন কমিটিতে।

তবে যুবলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া মাইনুল হোসেন খানকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুবলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁদের অভিযোগ, মাইনুলের বয়স ৫৫ বছরের বেশি। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা গেছে, ১৯৬৪ সালের ২৭ জুন তাঁর জন্ম। সম্মেলনের সময় তাঁর বয়স ছিল ৫৫ বছর ৫ মাস।

এ বিষয়ে কথা বলতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মাইনুল হোসেন ফোন ধরেননি। চাঁদপুরের এই মাইনুল মহানগর ছাত্রলীগ থেকে যুবলীগের রাজনীতিতে আসেন। তিনি উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও সর্বশেষ কমিটির সভাপতি।

শ্রমিক লীগের এক নেতা নিয়ে বিতর্ক

এক-এগারোর পরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রায় ১৮ মাস কারাগারে থাকা মোল্ল্যা আবুল কালাম আজাদ জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ নভেম্বর আবুল কালাম ও তাঁর স্ত্রী কোহিনুর সুলতানার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক।

এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুদকের মামলা থেকে আমার স্ত্রীর নাম কোয়াশ (বাতিল) করা হয়েছে উচ্চ আদালতে। আর আমার মামলা স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাই যে মামলার অস্তিত্ব নেই, সেটিতে পরোয়ানা জারির প্রশ্নই ওঠে না।’

এবার শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন পাবনার ফজলুল হক। তিনি আগের কমিটিতে কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। তিনি মজুরি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য। আর সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুরের কে এম আযম খসরু আগের কমিটিতে প্রচার সম্পাদক ছিলেন। সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ছিলেন তিনি।

সাবেক ছাত্রলীগ দিয়েই স্বেচ্ছাসেবক লীগ

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন সভাপতি হয়েছেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও আগের কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আগের কমিটির সহসভাপতি আফজালুর রহমান। স্কুল ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন ঢাকার নির্মল রঞ্জন। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ হয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতিতে আসেন। ময়মনসিংহের আফজালুর রহমানও ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির পর স্বেচ্ছাসেবক লীগে আসেন।

এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির শীর্ষ নেতার নামও ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি ঢাকার ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও দক্ষিণখান স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আনিসুর রহমান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তারিক সাঈদ। ঢাকা মহানগর উত্তরে সভাপতি হয়েছেন সেখানকারই ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া।

কৃষক লীগের সভাপতি হয়েছেন সমীর চন্দ। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংগঠনের শীর্ষ দুই পদের একটিতে নারী নেতৃত্ব এসেছে এবার। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন উম্মে কুলসুম। পেশায় আইনজীবী কুলসুম গত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গাইবান্ধায় জন্ম নেওয়া উম্মে কুলসুম দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ছিলেন।