তাঁরা আমাদেরও বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

‘একসময় এই দেশের সম্পদ দিল্লিতে পাচার হতো, তারপর পাকিস্তানের পিন্ডিতে পাচার হয়। এখন এই দেশের সম্পদ বিশ্বের প্রভাবশালী সব দেশে পাচার হচ্ছে। আমাদের শাসকেরা সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করছেন। কক্সবাজার ধ্বংস করে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র করছেন। এসব করে শাসকেরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করছেন। তাঁরা এখন আর এই দেশে তাঁদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন না। ফলে তাঁরা আমাদেরও বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন।’

শুক্রবার রাজধানীর পল্টনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

সম্মেলনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও উপকূলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করার দাবি জানানো হয়। আর উপকূলজুড়ে বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানোসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। আগামী জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ও লংমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করা এই দেশকে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে সুন্দরবন ও উপকূল ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং টেকসই উন্নয়নের পক্ষে অনেক সুন্দর কথা বলেন। কিন্তু দেশে তাঁর সরকার একের পর এক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলছে।’

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সুন্দরবন ও দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা বৃহত্তর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি সুন্দরবনের চারপাশে কয়েক শ শিল্প–কারখানা গড়ে উঠছে। এসব কারখানার কারণে ইতিমধ্যে সুন্দরবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষায় দেশের মানুষকে নিয়ে সামনের দিনে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা জাতীয় কমিটির জেলার নেতারা বক্তৃতা করেন। তাঁরা জানান, সরকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।

সম্মেলন থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। উপকূলজুড়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে সেখানে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করাসহ ২০২০ সালের জন্য জাতীয় কমিটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন এবং জেলা-উপজেলায় সমাবেশ, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচার কর্মসূচি পালন, মার্চে ফুলবাড়ী থেকে দিনাজপুরে পদযাত্রা এবং বিভাগীয় ও উপকূলীয় সমাবেশ, এপ্রিলে ঢাকামুখী জাগরণ যাত্রা ও ঢাকায় সমাবেশ এবং সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবনে লংমার্চ।

সম্মেলনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া আন্দোলনের পক্ষের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।