পাবনায় ৯০% জমির উর্বরতা কমেছে

বেশি ফসলের আশায় জমিতে অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত সার, কীটনাশক ব্যবহার করায় পাবনা জেলার ৯০ শতাংশ জমির উর্বরতা শক্তি কমে গেছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ জমির উর্বরতা শক্তি নিম্ন থেকে নিম্নতর স্তরে নেমে গেছে। ভারসাম্যহীনভাবে মাটিতে বেড়েছে আর্সেনিক, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, নাইট্রোজেন ও দস্তা।

মাটির গুণাগুণ নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, পাবনা। গবেষণায় বলা হয়েছে, মাটিতে ভারসাম্যহীনভাবে আর্সেনিক ও দস্তা বাড়ায় শুধু যে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, উৎপাদিত ফসল খাদ্য হিসেবে গ্রহণের পর তা প্রভাব ফেলছে মানুষের শরীরেও। যার অন্যতম লক্ষণ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও ক্যানসার।

‘মাটির শ্রেণীকরণ, ফসল বিন্যাস ও উর্বরতা মূল্যায়ন’ শিরোনামে ওই গবেষণা শুরু হয় ২০১৮ সালে। চলতি বছরের নভেম্বরে তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। জেলার ৯টি উপজেলার মাঠ থেকে ৩৮৬ স্থানের মাটির নমুনা পরীক্ষা করে ওই তথ্য পেয়েছেন গবেষকেরা। তাঁদের পরামর্শ, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ৯ উপজেলায় ১ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমির মাটি ৫ রকমের। মাটির এই বৈশিষ্ট্যের কারণে ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলায় সবজি, সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজ এবং সদর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর ও বেড়া উপজেলায় ধান ও কালাইয়ের উৎপাদন বেশি হয়।

গবেষণায় যুক্ত ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, কৃষকেরা অধিক ফলনের আশায় ভারসাম্যহীনভাবে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে মাটিতে ফসফরাস ও গন্ধক সারের উচ্চমাত্রা তৈরি হয়েছে। সবজিপ্রধান ঈশ্বরদী উপজেলার ১২৮ স্থানের মাটির নমুনা পরীক্ষা করে ৬২ শতাংশ জমিতে উচ্চমাত্রায় ফসফরাস, ২৩ শতাংশ জমিতে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও ৪৯ শতাংশ জমিতে উচ্চমাত্রায় সালফার পাওয়া গেছে। বেড়েছে আর্সেনিক ও জিংকের মাত্রা। ফলে জমির পাশাপাশি এসব উপাদান মানবশরীরেরও ক্ষতি করছে।

জেলার প্রবীণ চিকিৎসক ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ইফতেখার মাহমুদ বলছেন, মাটিতে ক্ষতিকর পদার্থ থাকলে ফসলের মাধ্যমে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

জেলা সদর, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার ১০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে কম সার ব্যবহার করেই তাঁরা বেশ ভালো ফলন পেতেন। কিন্তু এখন অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফলন বাড়ছে না। শাক, সবজি, ধান, গমসহ প্রতিটি রবিশস্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়েছে।

সদর উপজেলার কোলাদি গ্রামের কৃষক মমিন উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি দুই বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন। ঠিকমতো সার ও কীটনাশক দিয়েছেন। কিন্তু ধানের শিষ বের হওয়ার পরই তা শুকিয়ে যায়। আমজাদ হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, তিনি মাটির গুণাগুণ বোঝেন না। বৈজ্ঞানিক উপায়ে সার–কীটনাশক কেমন মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে, তা–ও জানেন না। বাবা–চাচাদের দেখে ও নিজের আন্দাজ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করেন। এতে ফসলের গাছ দ্রুতই বেড়ে ওঠে। কিন্তু সে তুলনায় ফলন বাড়ে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজাহার আলী বলেন, ফসলের চাহিদা না বুঝে সার প্রয়োগ না করায় গাছ বাড়ে, ফলন বাড়ে না। কেমন মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে, সে বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।