চকবাজার ও লালবাগে পুলিশের ওপর আক্রমণ, বিএনপির ৩২ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা, কারাগারে ৫

রাজধানীর চকবাজার ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় পুলিশ সদস্যদের ওপর আক্রমণ ও নাশকতা চালানোর অভিযোগে বিএনপির ৩২ জন নেতা কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর চকবাজার ও কোতোয়ালি থানায় এই মামলা হয়েছে।

এই দুটি মামলায় ইতিমধ্যে পাঁচজন বিএনপি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) পাঠিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত ওই পাঁচ আসামিকে এক দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।

চকবাজার থানার মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি হলেন, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার ষোলঘর গ্রামের আফছার ব্যাপারীর ছেলে লিটন (২৬), মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার কোলাপাড়া গ্রামের সিরাজের ছেলে মো. আসিফ (২১), নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার নাটেশ্বর গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে মুহিন (২১) এবং বংশালের সিদ্দিক বাজার এলাকার রফিকুল ইসলাম (২৬)। আর কোতোয়ালি থানার মামলায় গ্রেপ্তার আসামি হলেন, কোতোয়ালি ইসলামপুর রোডের নুরুল আফসার লিমন (৩২)।

চকবাজার থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মুন্সী আবদুল মান্নান আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছেন, গতকাল দুপুর আড়াইটার সময় বাদী কোতোয়ালি থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন জানতে পারেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হরনাথ ঘোষ রোডে রয়েল হোটেলের সামনে মিছিল করছে। তখন চকবাজার থানার বিএনপির সভাপতি আনোয়ার পারভেজের নেতৃত্বে অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা কর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, কিলঘুষি মারে। বাঁশের লাঠি দিয়ে পুলিশকে পিটিয়ে আহত করে। বিএনপির নেতা কর্মীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি বাঁশের লাঠি ও ছয়টি ছোট ছোট ইটের টুকরা জব্দ করা হয়েছে।

অপরদিকে কোতোয়ালি থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম আদালতকে এক প্রতিবেদন বলেছেন, গতকাল দুপুর ২টা ৫ মিনিটে বাদী পুলিশের এসআই আক্তাররুজ্জামান জানতে পারেন, ইসলামপুরের সরফুদ্দিন ম্যানশনের সামনের সড়ক কে বা কারা মিছিল করছে। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেখতে পান, একদল লোক সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় যানচলাচলে বাধা দিয়ে মিছিল করছে। তখন পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মেরে বিভিন্ন দিকে দৌড়াদৌড়ি করে। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হঠাৎ করে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে যানবাহন ভাঙচুর করেছে।

মামলার বাদী আকতারুজ্জামান সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির নেতা কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়েছে। পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছে। তিনি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।

চকবাজার থানার মামলার এজাহার নাম থাকা আসামিরা হলেন, লিটন (২৬), আসিফ (২১), মুহিন (২১), রফিকুল ইসলাম (২৬), চকবাজার থানা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার পারভেজ, টিপু সুলতান (৪৫), মনিউর রহমান (৪৩), চকবাজার থানা যুবদলের আহ্বায়ক সাবা করিম লাকী শাহ (৪২), নাজিম উদ্দিন (৪৫), রিয়াজ উদ্দিন (২৮), রফিকুল ইসলাম রাসেল (৪৫), ফরহাদ হোসেন (৩০), আরমান আহম্মেদ (৩০), মীর আশরাফ আলী (৫৫), মীর নেওয়াজ আলী (৪৩), সাইদ হোসেন সোহেল (৪৩), শফিউদ্দিন আহম্মেদ সেন্টু (৪২), তাসাদ্দেক হোসেন বাবলু (২৩) এবং আমিনুল ইসলাম (৪৫)।

আর কোতোয়ালি থানার মামলার আসামিরা হলেন, কোতোয়ালি থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, নুরুল আফসার লিমন (৩২), হায়দার আলী বাবলা (৫০), নান্নু (৫১), আবুল হোসেন (৫০), বিপ্লব (৫০), আলাউদ্দিন (৬০), রজ্জব আলী, মো. মতি, শেখ জাবেদ উদ্দিন (৪৪), সাইফুল ইসলাম (৩৫), শেখ আবেদ উদ্দিন।

দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।