জেসমিন কি পারবেন

জেসমিন আক্তার
জেসমিন আক্তার

অভাবের তাড়নায় ছয় ভাইবোনের সংসারে খাওয়াদাওয়ার কোনো ঠিক ঠিকানা ছিল না। তাই এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোচিং করা এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম তোলার সামর্থ্যও ছিল না। সবার বড় হওয়ায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন চাপা রেখে সংসারের হাল ধরতে স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। অবশেষে এক সেনাসদস্যের আগ্রহে তিনি শেষ সময়ে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী।

এই শিক্ষার্থীর নাম জেসমিন আক্তার। তিনি শেরপুর সদরের গাজিরখামার বাজারের ভ্রাম্যমাণ চা–বিক্রেতা মো. জিয়াউল হোসেনের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও তাঁর সামনের দিনগুলো নিয়ে চিন্তিত পরিবার।

জেসমিনের ছোট বোন সাবিনা আক্তার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে এইচএসসিতে মানবিক শাখায় শেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছে।

জেসমিন ২০১৭ সালে এসএসসিতে গাজিরখামার উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০১৯ সালে এইচএসসিতে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে ৪.৯২ পান।

গত ৩১ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম পূরণের শেষ দিন ছিল। ৩০ অক্টোবর জেসমিন সম্পর্কে জানতে পারেন শেরপুর দরিদ্র অসহায় উন্নয়ন সংস্থার (ডপস) প্রতিষ্ঠাতা সেনাবাহিনীর সদস্য মো. শাহিন মিয়া। তিনি মেয়েটির খোঁজখবর নিতে তাঁদের বাড়িতে যান। তাঁর পরামর্শে ও প্রচেষ্টায় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন জেসমিন।

তেমন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই জেসমিন ৬ নভেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ‘গ’ ইউনিট থেকে তিনি মেধাতালিকায় ১১৭তম স্থান অর্জন করেন। ভর্তির শেষ তারিখ আগামী ৪ জানুয়ারি। কিন্তু ভর্তির জন্য প্রায় ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর জেসমিনের পরিবার এখন তাঁর ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তার পড়েছে।

জেসমিন বলেন, ‘কত দিন–রাত না খেয়ে থেকেছি, তার কোনো হিসাব নেই। সবাই বাবাকে চাপ দিত আমাকে কেন গার্মেন্টসে পাঠানো হয় না। তাই এইচএসসি পরীক্ষার পর সংসারের হাল ধরতে স্থানীয় একটি স্কুলে চাকরি নিয়েছি। কিন্তু শাহিন ভাইয়ের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এখন কীভাবে সেই টাকা সংগ্রহ হবে, সেটাই চিন্তা।’

জেসমিনের বাবা জিয়াউল হোসেন বলেন,‍ তাঁর সামর্থ্য নেই। কিন্তু ছেলেমেয়েগুলোর লেখাপড়ায় ভীষণ আগ্রহ। সামান্য চা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না–খেয়ে সংসার চলে। মেয়েদের পড়ালেখার খরচ দেবেন কীভাবে। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাইছে। কিন্তু এত টেহা কেমনে জোগাড় করমু। কোনো পথ খুঁইজা পাইতাছি না।’

ডপসের প্রতিষ্ঠাতা সেনাসদস্য শাহিন মিয়া বলেন, ‘মেয়েটি দারুণ মেধাবী। এত ভালো ফলাফল, কিন্তু উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এখন ভর্তি করতে দৌড়ঝাঁপ করছি।’