জাবি উপাচার্যের 'দুর্নীতি'র খতিয়ান প্রকাশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের ‘দুর্নীতি’র খতিয়ান প্রকাশ করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ খতিয়ান বই আকারে প্রকাশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতিবেদন এবং উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান’ শিরোনামে ২২৪ পৃষ্ঠার এই খতিয়ানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথন ও সংবাদ-প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এই বইয়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়া, তিনজন ছাত্রলীগ নেতার টাকা পাওয়ার স্বীকারোক্তি, দরপত্র আহ্বানে অনিয়ম, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডারের শিডিউল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ও অভিযোগের তদন্ত না করা, উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি কমিটিতে রাখা, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের টর (টার্মস অব রেফারেন্স) ও মহাপরিকল্পনার চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন না নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তথ্য-উপাত্তসহ প্রকাশ করে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিয়মতান্ত্রিকভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। যখন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনই তিনি হামলা মামলা দিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বরে উপাচার্যের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের এক অংশের হামলার পর উপাচার্য তাঁর পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। উপাচার্যের পদত্যাগের সঙ্গে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজদের চক্র ভেঙে একটি সুষ্ঠু সুন্দর প্রশাসন চাই।’

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সমস্ত প্রশাসনিক, অ্যাকাডেমিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অর্থনৈতিক হিসাব জনপরিসরে প্রকাশ করাসহ ৭ দফা প্রস্তাব পেশ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ। অন্য প্রস্তাবনাগুলো হল- উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, সংশোধন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সকল অংশীজনের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা ছাড়া উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ না করা, প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করা, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা এবং বাণিজ্যিক কোর্স ও ব্যবস্থাপনার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর সমন্বয়ক শিক্ষক রায়হান রাইন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন আব্দুল জব্বার হাওলাদার, আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক খবির উদ্দিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বাংলা বিভাগের শিক্ষক শামীমা সুলতানা ও তারেক রেজা প্রমুখ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে কাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার স্থিরচিত্র প্রদর্শন ও গণসংযোগ এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলনে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরের দিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের মারধর করে সরিয়ে দেন। ওই দিনই জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৫ নভেম্বর থেকে আবার ক্যাম্পাস সচল করা হয়।