চট্টগ্রামে ঢোকার মুখে যানজট বিড়ম্বনা

ধুলাবালুতে ছেয়ে আছে পুরো এলাকা। কয়েক হাত দূরের যানবাহনও দেখা যায় না। গতকাল বিকেল চারটায় শাহ আমানত সেতুর মোড়ে।  প্রথম আলো
ধুলাবালুতে ছেয়ে আছে পুরো এলাকা। কয়েক হাত দূরের যানবাহনও দেখা যায় না। গতকাল বিকেল চারটায় শাহ আমানত সেতুর মোড়ে। প্রথম আলো

সমুদ্রবন্দরের কারণে চট্টগ্রাম নগরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি কিংবা জীবিকার খোঁজে এখানে প্রতিদিন বিপুল মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু নগরের ঢোকার মুখেই তাঁদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। প্রবেশমুখগুলো পরিণত হয়েছে অস্থায়ী টার্মিনালে। যানজটও যেন পিছু ছাড়ছে না।

শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এসব প্রবেশমুখগুলো এখন ধুলায় ধূসর। গাড়ি রাখা, যাত্রী ওঠা-নামা, গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শৃঙ্খলা নেই। এসব ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন লোকজন।

গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর তিন প্রতিবেদক চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ প্রবেশমুখ সরেজমিনে এই চিত্র দেখেন। প্রতিদিনই এসব দুর্ভোগ লেগে থাকে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী যাত্রীরা। যানজট ও ধুলাবালুর জন্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন বাসিন্দারা। এ জন্য সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগকেও দুষছিলেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম নগরের পাঁচ প্রবেশমুখ হচ্ছে এ কে খান মোড়, শাহ আমানত সেতুর শহর প্রান্ত, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন মোড় ও কালুরঘাট সেতুর শহর প্রান্ত।

নগরের প্রবেশমুখে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আন্তজেলা বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা আনা গেলে এবং অনিবন্ধিত, ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলে প্রবেশমুখের বিশৃঙ্খলা দূর হবে। এ জন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। আর উন্নয়নকাজের কারণে ধুলা জমে যাচ্ছে বলে মনে করেন মেয়র।

কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও কালুরঘাট সেতু

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত দুই প্রবেশমুখে অবস্থান করে দেখা যায়, সড়কের ওপর এলোপাতাড়িভাবে রাখা হয়েছে গাড়ি। দুই পাশের খালি জায়গায়ও গাড়ি। কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীর জন্য। কোনোটির চলছে মেরামতের কাজ। গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা মানার গরজ নেই চালকদের। যাত্রীবাহী মিনিবাসগুলোর একটি আরেকটিকে কোনোভাবেই সামনে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছিল না। আবার সামনে যাওয়ার জন্য অনবরত হর্ন দিয়ে চলছেন পেছনের গাড়িচালক। এর মধ্যে বিপজ্জনকভাবে চলছে যাত্রী ওঠা-নামা।

এই পথ দিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়ার একাংশ এবং বোয়ালখালী উপজেলার লোকজন নগরে আসা-যাওয়া করেন। শুধু বৃহস্পতিবার নয়, এই চিত্র প্রতিদিনের বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা, দোকানি ও গাড়িচালকেরা। তাঁরা জানান, সেতুর ওপর ট্রেন চলাচল করলে গাড়ির জট কখনো কখনো ঘণ্টা ছাড়িয়ে যায়।

কালুরঘাট খেজুরতল এলাকা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে নগরের আরেকটি প্রবেশমুখ কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায়ও সারাক্ষণ গাড়ির জট লেগে থাকে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও রাঙামাটির কাপ্তাই থেকে যাত্রীরা এই পথ দিয়ে নগরে প্রবেশ করেন। এসব এলাকা থেকে আসা সিএনজিচালিত অটোরিকশার অস্থায়ী স্টেশনে পরিণত হয়েছে নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথায়।

নগরের এই দুই প্রবেশমুখে থাকা দোকানিরা জানান, গাড়িচালকেরা তাঁদের দোকানের সামনেই গাড়ি রেখে দেন। ক্রেতাদের চলাচলের সমস্যা হয়। আবার এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে ধুলাবালু উড়তে থাকে। এসব কারণে তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।

শাহ আমানত সেতুর শহর প্রান্ত

বকশির হাট ওয়ার্ডের সীমানায় পড়েছে শাহ আমানত সেতুর শহর প্রান্ত। প্রতিদিন দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের হাজার হাজার যাত্রী এই মোড় দিয়ে নগরে প্রবেশ করে। হাজার হাজার মানুষের বিচরণ থাকে ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত। তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অবস্থা কাহিল হওয়ার উপক্রম। কারণ, যানজট স্থানীয় বাসিন্দাদের স্থবির করে ফেলেছে। এর সঙ্গে ধুলাবালুর উৎপাত তো রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিন ঘুরে সেতু-সংলগ্ন গোলচত্বর চারদিকে অসংখ্য গাড়ি এলোপাতাড়ি দেখা গেছে। ট্রাফিক আইন মানার কোনো নিয়মকানুন তাগিদ নেই। সেতুমুখী একটির পেছনে আরেকটি বাস যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল। ফলে পেছনের গাড়ি আটকে থাকতে দেখা গেছে। ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই চিত্র দেখা যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

অক্সিজেন মোড়

নগরের অক্সিজেন মোড় ও হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া ব্রিজ এলাকায় যানজট নিত্যদিনের চিত্র। বাস–টার্মিনাল না থাকায় অক্সিজেন মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। চট্টগ্রাম সিটির জালালাবাদ ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এই অক্সিজেন মোড়। রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখা, স্থায়ী বাস–টার্মিনাল না থাকার অক্সিজেন মোড়ে যানজট লেগে থাকে।

অক্সিজেন মোড়ের পূর্ব পাশে শহীদনগর থেকে বাচ্চাদের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে নিয়ে যান গৃহিণী পারভীন আক্তার। তিনি বলেন, অক্সিজেন মোড়ে তাঁর প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট যানজটে আটকে থাকতে হয়। অনেক সময় স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়। বললেন, ‘যানজট তো আছেই। এর ওপর শব্দ ও বায়দূষণে বাচ্চাদের দম বন্ধ হয়ে আসে।’

এ কে খান মোড়

চট্টগ্রামে প্রবেশের অন্যতম দ্বার এ কে খান মোড় থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বাসগুলো ছেড়ে যায়। রাস্তায় পার্কিং করা বাসগুলোতে ডেকে তোলা হয় যাত্রী। কার আগে কে যাত্রী নেবে সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। যাত্রী তোলার কারণে পেছনের গাড়িগুলো আটকে থাকতে দেখা গেছে।