এ কে খান ও অক্সিজেন মোড়: দম বন্ধ হয়ে আসে সবার

যাত্রী ওঠা-নামার ব্যাপারে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। বিশৃঙ্খলার কারণেই এখানে যানজট বেশি। গতকাল দুপুরে অক্সিজেন মোড়ে।  সৌরভ দাশ
যাত্রী ওঠা-নামার ব্যাপারে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। বিশৃঙ্খলার কারণেই এখানে যানজট বেশি। গতকাল দুপুরে অক্সিজেন মোড়ে। সৌরভ দাশ

ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে চট্টগ্রামে ঢুকেই নগরের এ কে খান মোড় অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় গাড়িগুলোকে। একই অবস্থা নগরের আরেক প্রবেশপথ অক্সিজেন মোড়ের। এতে দম বন্ধ হয়ে আসে যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থায়ী বাস–টার্মিনাল না থাকায় যানজট লেগে থাকে বলে ভুক্তভোগী, পুলিশ ও গাড়িচালক–মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এ কে খান মোড়। এখান থেকে ঢাকাসহ সারা দেশগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। রয়েছে অসংখ্য কাউন্টার। রাস্তায় ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলোতে ডেকে ডেকে তোলা হয় যাত্রী। কার আগে কে যাত্রী নেবে সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এ কারণে রাস্তায় একাধিক বাস পাশাপাশি থাকে। অবশিষ্ট যেই জায়গা থাকে কোনো রকমে একটি গাড়ি যেতে পারে।

৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এ কে খান মোড়ে অবস্থান করে সরেজমিন এই চিত্র দেখা গেছে। বাসচালকেরা জানান, যাত্রী নিয়ে তাঁদের ঢাকাসহ অন্য গন্তব্যে যেতে হবে। খালি গাড়ি গেলে তাদের তেল খরচও উঠবে না।

সরেজমিন দেখা যায় বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে এই সড়কে। কিন্তু যাত্রীবাহী বাসগুলো যাত্রী নেওয়ার জন্য মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক পুলিশ এসে একটি গাড়িকে সরিয়ে দিলেও আরেকটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়।

শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস দুপুরে রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কোনো যাত্রী ছিল না। বাসচালক আশিকুর রহমানকে কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ছোট বাসে করে নগরের জিইসি থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। তাঁরা এসে পৌঁছালে তাঁদের নিয়ে রওনা হবেন। তিনি বলেন, স্থায়ী বাস–টার্মিনাল থাকলে রাস্তায় দাঁড়াতে হতো না।

এ কে খান মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট আজিজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস–টার্মিনাল না থাকায় যাত্রী ওঠানোর জন্য রাস্তায় দাঁড়ায়। পুলিশ যতটুকু পারে গাড়িগুলো সরিয়ে দিয়ে রাস্তা যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ব্যস্ততম এই সড়কে বাস কাউন্টার না রেখে শহরের এক পাশে টার্মিনাল হলে সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে বাসগুলো গন্তব্যে যেতে পারে।

 চট্টগ্রাম বাস পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম বলেন, সিটি গেটে আশপাশের বাস–টার্মিনাল করার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগমন্ত্রী এবং চট্টগ্রামের মেয়রকে জানানো হয়েছে।

৪ ডিসেম্বর দুপুরে একই অবস্থা দেখা গেছে নগরের অক্সিজেন মোড়ে। রাস্তার দুই পাশেই বাস, ট্রাক, টেম্পো ও অটোরিকশার ভিড়। কোনোটিতে যাত্রী ওঠা–নামা করছে। কোনোটি দাঁড়িয়ে নিশ্চল। সড়ক বিভাজনের পাশে যে সরু জায়গা, সেখান দিয়ে কোনোমতে চলছে গাড়ি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে যানজট লেগে থাকে। নিত্য দুর্ভোগে ক্লান্ত এই পথের যাত্রীরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত এই অক্সিজেন মোড়। সেখানে প্রতিদিনের এই দুর্ভোগ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই নগরবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখা, স্থায়ী বাস–টার্মিনাল না থাকায় অক্সিজেন মোড়ে যানজট লেগে থাকে। আবদুল মালেক নামের এক বাসশ্রমিকের প্রশ্ন, ‘টার্মিনাল নাই। গাড়ি রাস্তায় না রাখলে কোথায় রাখব? যাত্রী না নিয়ে খালি বাস যাবে নাকি?’